এস,এম,আজিজুল হক : করোনা ভাইরাসের চলমান ছোবলকে বৈশ্বিক মহামারী বলা যায় কিনা-তা স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষকরাই বলতে পারেন। অনেক ধরণের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা বা আঘাৎ ইতিপুর্বেও জনজীবনকে বিপর্যস্থ করেছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ সমস্যা একেবারেই ভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে হাজির হয়ে বিশ্বব্যপী যে তান্ডব চালাচ্ছে, তা ইতিপুর্বে কোন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় এমনটি ছিল না। উন্নত বিশ্বকেও নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে এই করোনার আঘাৎ। অর্থনৈতিক চাঁকাকে যেন কষে ব্রেক করে দিয়েছে। খরচ পোষাতে অনেক উন্নত রাষ্ট্র কর্মি ছাটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। পৃথিবীর কোন দেশই এমন আঘাৎ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশ কি ভাবে যে এই সমস্যার মোকাবিলা করে কর্মি ছাটাইয়ের বদলে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যহত রেখেছে-তা ভাবাই যায় না। বিশ্ব অর্থনীতির উপর যাদের ধারণা কম, এক মাত্র তারাই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে উল্টাপাল্টা কথা বলতে পারছেন। আর দুর্ণীতি তো আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু এই আমলাদের দুর্ণীতি নিয়ে যে আক্ষেপ করে ভাষণ দিয়ে গেছেন-তা কর্ণকুহরে আজও অনুরণন হয়। এ সব দুর্ণীতিবাজ আমলা বা ক্ষমতাশীন দলে ঘাপটি মেরে থাকা লুটেরা অন্য গ্রহ থেকে আসেনি। এসব দুর্ণীতিবাজ আমলা বা বিপথগামী রাজনীতিবিদদের দেয়া দুদশ টাকা খেয়ে অনেক কথিত বুদ্ধিজীবি মুখে কুলপ এঁটে বসে থাকেন এবং সময় সময় তাদের নামকির্তণ করতেও দ্বিধা করেন না। সুযোগ পেয়ে কে ছেড়েছে? আঙ্গুলে গুনে দেখানো যায় এমন গুনীব্যক্তি বা দেশ প্রেমিকের সংখ্যা। জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দেশ প্রেমিক জনগনের দরকার। করোনাকালে সেই কথিত দেশ প্রেমিকদের অনেকেরই থলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে। করোনাকালে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমুহকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে কারা? এরা কোথা থেকে এসেছে? নিশ্চয়ই ভিনগ্রহ থেকে আসেনি? করোনকালে সরকার প্রদত্ব সহায়তা বন্টনে কিছু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির (মেম্বর চেয়ারম্যান) যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট আমরা দেখেছি-তা ভাবতেও ঘেন্না লাগে।
এত চোর ছ্যাঁচোরকে সামাল দিয়ে করোনা মোকাবেলা করা নিশ্চয় সরকারের জন্য খুব সহজ কাজ নয়। তবে রাঘব বোয়ালদের জন্য যে অশনী সংকেত দেখা যাচ্ছে,সেই সংকেতের ডাকে সারা দিয়ে সরকারের পাশে এসে দাঁড়ানোর বিকল্প কিন্তু নেই এখন। এখনই শ্রেষ্ঠ সময়-দুর্ণীতির বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সাথে সুর মিলানোর। বিরোধীতা করার অনেক সময় পাওয়া যাবে-বেঁচে থাকার কর্মসুচিতে সরকারের পাশে দাঁড়ালে জাতও যাবে না, কিম্বা রাজনৈতিক পরিচয়ও হারিয়ে যাবে না।
করোনার কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়া উন্নয়নের চাঁকার প্যাডেলে প্রথমেই পা রেখেছে বাংলাদেশ। যার দেখাদেখি অনেক উন্নত রাষ্ট্রও বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ অনুসরণ করতে বাধ্য হয়েছে। করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া উন্নয়নের চাঁকার গতি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ মহা বিষ্ময়। দুর্ণাম আর বদনামের ঢোল বাঁজাতে আমাদের দেশের কিছু অভ্যস্তরা করোনাকালে বিশ্বের দুর্ণীতি বা ব্যর্থতা চোখে দেখে না। সফলতা ব্যর্থতা জমজ স্বত্বা। যে কোন কাজের সফলতা ব্যর্থতা থাকবেই। গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করে কুনোব্যাঙের মত শুধু নিজের চারপাশটা দেখেই বিশ্ব সংবাদ পাঠ করা যায়না। বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলার কৌশল আজ বিশ্বের কাছে রোলমডেল।
