পাবনা থেকে নিজস্ব প্রতিনি, ৯ ডিসেম্বর : পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ তপন হায়দিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী, জবর দখল ও চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে একদল ভূক্তভূগী।
প্রায় ১১ বছর আগে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাঁথিয়া সরকারী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক নুরুল ইসলাম এবং ১৫ বছর আগে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শামসুল ইসলাম বাড়ি করেন সাঁথিয়া উপজেলার দৌলতপুরে। সারা জীবনের সঞ্চয়ের আয়ে নির্মিত এই বাড়িই মহাবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাদের। নবনির্মিত এ বাড়ি দুটি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তপন হায়দার সানের বাগান বাড়ি লাগোয়া। সকল কু-কর্ম ফাঁস করতে পারে এ সন্দেহ তাদের উপর শুরু হয় সান বাহিনীর অত্যাচার। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে ঘরের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও নারী রেখে পুলিশে দেওয়া ভয় দেখানো। প্রভাষক নুরুলকে কয়েক দফায় তুলে নিয়ে বেদম মারপিট করে জোর পূর্বক লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায়। মাথায় মদ ঢেলে গায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা, তার স্ত্রীর গায়েও হাত তোলাসহ সন্তানদের হত্যার হুমকিও দেন। বাড়ি দুইটি নাম মাত্র টাকা নিয়ে বিক্রির জন্য উভয়কে এ নির্যাতন করা হতো। সান বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে প্রভাষক নুরুল ইসলাম ও শামসুল নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। নুরুলের বাড়ি পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকলেও শামসুলের বাড়ি জোর পূর্বক দখল করে সান বাহিনীর সন্ত্রাসীরা বসবাস করছে।
লোমহর্ষক এ অভিযোগ ছাড়াও একাধিক বাড়ি ও জমি দখল, টর্চার সেলে নির্যাতন, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তপন হায়দার সান এর বিরুদ্ধে। । নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্থরা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন। পাবনার পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেড়া সার্কেল) অভিযোগের তদন্ত করছেন। এদিকে সাক্ষ্য না দিতে ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি প্রদান করা হচ্ছে বলে ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে দেওয়া একাধিক অভিযোগ সুত্রে ও সরেজমিনে জানা যায়, সাঁথিয়া দৌলতপুরে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক তপন হায়দার সানের বাগান বাড়ির টর্চার সেলের পাশে দখল করা বাড়িগুলোর আশেপাশে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্থরা সান বাহিনীর ভয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতেই চাননি। পরে নাম না প্রকাশের শর্তে তারা জানান, গত দুই বছরে দৌলতপুর গ্রামের সালাম মল্লিক ১৬ শতাংশ জমি ৭৪ লক্ষ টাকায় ক্রয় করলে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সালাম ও তার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করে সান বাহিনী। সালাম বাধ্য হয়ে মাত্র ১১ লাখ টাকার চেক সানের হাতে তুলে দিয়ে মুক্তি পান।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর গ্রামে ইছামতি ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির মালিক এন্তাজ ও মন্তাজের নিকট চাঁদা দাবী করে না পেয়ে কয়েকবার ফ্যাক্টরি ভাংচুর ও শ্রমিকসহ মালিকদের মারধর করে। এন্তাজ ও মন্তাজকে ধরে নিয়ে টর্চার সেলে নির্যাতন চালায়। অবশেষে প্রতি ঈদ উপলক্ষে ও মাসিক চাঁদা দেওয়ার সম্মতিতে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়। এছাড়াও দৌলতপুরের সাঁথিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, জালাল উদ্দিন, নুসরাত জাহান কেয়া, উপধ্যাক্ষ শফিকুল ইসলাম, মোবাইল ব্যবসায়ী আবু তালেব, সাঁথিয়া সরকারী ডিগ্রি কলেজের শরীর চর্চ্চা শিক্ষক মুক্তি, ইন্সুরেন্স কোম্পানীর ম্যানেজার নুরুল আমীন, টিনের দোকানদার মোক্তার হোসেন, ভূষি ব্যবসায়ী টোকন, মাটিকাটা সর্দার ইসলাম, ছোন্দহ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আল হক, চায়ের দোকানদার নুরু, দৌলতপুর স্কুলের শিক্ষক ইমরান, প্রাইমারী শিক্ষক রেজাউল, অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য ফিরোজ, ঔষধের দোকানদার মাহতাব ও তার ভাই মাসুদ, বোয়ালমারী কামিল মাদরাসার উপাধ্যাক্ষ আবু হানিফ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শামসুল হকসহ দৌলতপুরের আরও অগনিত মানুষের নিকট থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদা নিয়েছেন তপন হায়দার সান।
সানের গোলশানয়ারা মার্কেটের উত্তর পাশে রয়েছে মনমথপুর গ্রামের লিটনের ৭টি দোকান। ওই দোকানগুলো জোরপূর্বক তার কাছে বিক্রয়ের জন্য লিটনকে চাপ দিয়ে কাজ না হওয়ায় হত্যার হুমকি দেয়। ভয়ে লিটন এলাকায় আসতে না পারায় জোরপূর্বক এখন দোকানের ভাড়া তুলে নিচ্ছে সান। ঔষধ কোম্পানি হেলথ কেয়ারের রিপ্রেজেন্টেটিভ ও তার বন্ধুর সাথে সান বাহিনীর তর্ক হয়। এ অজুহাতে দৌলত পুর চায়ের দোকানের সামনে ইয়াবা ও অস্ত্র পকেটে দিয়ে ভয় দেখিয়ে ওই দুজনের নিকট থেকে ৭০হাজার টাকা চাঁদা নেয়।
তপন হায়দার সান উপজেলা আ”লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর পরই নিজেই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ঈশ্বরদী বিহারী পল্লী হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের এনে নাইট গার্ডের আড়ালে সাঁথিয়া উপজেলা সদরসহ কয়েকটি বাজারে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে। এছাড়াও নারী ঘটিত কোন ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে চাঁদা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ধুলাউড়ি কলেজের অধ্যাপক বেলাল হোসেন জানান, দৌলতপুর গ্রামে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরির কাজ করতে গেলে উপ তপন হায়দার সান তাতে বাধা দিয়ে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাজমিস্ত্রিদের কাজ না করতে ভয় ভীতি