পাবনা থেকে এস, এম, শামিমা হক, ৫ জানুয়ারি : অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় এবার একুশে পদক পেলেন পাবনার বেড়ার কৃতি সন্থান জয়নগরের বিখ্যাত মির্জাবাড়ীর ছেলে মির্জা আব্দুল জলিল।
১৯৩৭ সালের ১৯ মার্চ পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার জয়নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা মির্জা আবদুল জলিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে দলীয় কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর বড়োভাই মির্জা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে তিনি কারাবরণ করেন। রাজশাহী কলেজে অধ্যয়নকালে দ্বিতীয়বার কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি অল পাকিস্তান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এপিইউএসইউ)-এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম কমিটির নেতা হিসেবে আইয়ুব-মোনায়েম খাঁর অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে মির্জা জলিল সহ বারো ছাত্রকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১৯৭৭-৯০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসক সমন্বয় কমিটির (প্রকৃচি) আহবায়ক হিসেবে তিনি জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকার-বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু আন্দোলনের মুখে সরকার তাঁর চাকরিচ্যুতির আদেশ প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। ২০০৬ সালের ২১ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা ভঙ্গ করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাঁকে ঢাকার শ্যামলী থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার সময় ড. মির্জা আবদুল জলিল দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষি সেলের কো-চেয়ারম্যান। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্যাসিফিক আঞ্চলিক প্রযুক্তি বিতরণ কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান।
১৯৭৮-৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভেটেরিনারি সমিতির মহাসচিব এবং পরবর্তী দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৮-৯২ সালে তিনি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের চার মেয়াদে নির্বাচিত সভাপতি এবং প্রকৃচির সভাপতি ছিলেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। মির্জা আবদুল জলিল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে ১৯৬২ সালে পশুচিকিৎসা ও পশুপালন বিষয়ে বিএসসি এবং ১৯৬৪ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন ।
১৯৭৩-৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে পশুপুষ্টি বিষয়ের ওপর তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন । তিনি আধুনিক প্রশাসন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, উচ্চতর গবেষণা, প্রযুক্তি প্রয়োগ, জনকল্যাণমূলক কাজে নেতৃত্ব প্রদান এবং আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন । মির্জা আবদুল জলিল ১৯৬৭ সালে পশুসম্পদ অধিদফতরে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
কর্মজীবনে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (পশুসম্পদ), পশুসম্পদ অধিদফতরে পরিচালক, বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৯৪ সালে তিনি অবসরে যান। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন । ২০০৯ সালে প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদায় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন।