পাবনা প্রতিনিধি, ২৬ ফেব্রুয়ারি : পাবনা জেলায় তালিকাভুক্ত একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছা (৮১) মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া দুইটায় সাঁথিয়ার নন্দনপুর তেথুঁলিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম জামাল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেড় বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নিজের কুঁড়েঘরে বসবাস করতেন এবং অর্থাভাবে ঠিকমতো মায়ের সুচিকিৎসা করাতে পারেননি তার সন্তানরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে সাঁথিয়ায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ভানু নেছা। গোলা-বারুদ মাথায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি। একবার গুলি লেগে আহত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে পাবনায় ও ঢাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে তাকে সম্মানিত করা হয়।
সাঁথিয়ার নন্দনপুর ইউনিয়নের তেথুঁলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভানু নেছার স্বামী আবদুল প্রামাণিক মারা যান কয়েক বছর আগে। ভানু নেছার দুই ছেলে দিনমজুরের কাজ করেন। মায়ের সরকারি ভাতা ও নিজেদের সামান্য আয়ে কোনোমতে চলত তাদের সংসার।
নারী মুক্তিযোদ্ধা ভানু নেছার ছেলে ইউনুস আলী জানান, দেড় বছর ধরে আমার মা বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। কোলে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিতে হতো। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ায় ইশারায় কথা বলতেন। তিনি ৬/৭ মাস ঠিকমতো খেতে পারতেন না। আজ মা আমাদের এতিম করে চলে গেলেন।
সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল লতিফ জানান, একাত্তরে নন্দনপুরে যখন পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমরা বাংকারে ছিলাম। এই ভানু নেছা তখন আমাদের অনেকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি কোমরে বেঁধে থানা থেকে গোলা-বারুদ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করেছিলেন।
ইউএনও এস এম জামাল আহমেদ বলেন, আমি তার অসুস্থতার সময় খোঁজখবর নিয়েছি। বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। তার মৃত্যুর খবর খুবই বেদনাদায়ক। কারণ, তার মৃত্যুতে পাবনাবাসী একমাত্র নারী মুক্তিযোকে হারাল। তার মৃত্যুতে আমরা শোক প্রকাশ করছি।
ভানু নেছার মৃত্যুতে পাবনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সবাই তার প্রতি শোক জ্ঞাপন করেছেন।