এস,এম, আজিজুল হক :
ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার বেড়া সদরের নেতৃত্বের রয়েছে শুবিশাল এক ইতিহাস। তৎকালীন বেড়া ইউনিয়ন বোর্ডের অধীন ক্ষুদ্র ও অল্প জনগোষ্ঠী সমৃদ্ধ একটি গ্রাম “বৃশালিখা”। মোটামুটি ভাবে বলা যায়, এই ছোট্ট গ্রামের বাসীন্দাগণই সেই বৃটিশ আমল থেকেই বেড়া তথা পাবনার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সে এক লম্বা ইতিহাস হবে। আমি সেদিক থেকে নজর ঘুড়িয়ে সাম্প্রতিক কালের দিকে নজর দিতে চাই।
ইউনিয়ন বোর্ড থেকে ইউনিয়ন কাউন্সিল। সর্বশেষ ১৯৮৮ সাল থেকে পৌর সভার মর্যাদা প্রাপ্ত হয় বেড়া।
১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত এই পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে
খুব অল্প বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলোচিত বৃশালিখা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন। এর পর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৯ সালের ৪ এপ্রিল দায়ীত্ব গ্রহণের মাত্র ছ’মাসের মধ্যে “গ” শ্রেণির পৌরসভা থেকে তিনি “খ” শ্রণির পৌর সভায় উন্নীত করতে সক্ষম হন।
পরবর্তীতে সীমানা বর্ধিতকরণ সংক্রান্ত মামলার জটিলতায় থমকে যায় এই পৌরসভার সিডিউল নির্বাচন। এই জটিলতা ও প্রতিকুলতার মধ্যেও বেড়া পৌর এলাকার উন্নয়নের চাঁকা তিনি নিজ মেধা ও প্রজ্ঞাবলে সচল রাখতে সক্ষম হন। বৃহত একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার কারণে আন্তঃদলীয় কোন্দলের মোকাবিলা করেই তিনি এগুতে থাকেন নিজ লক্ষ্য পুরণের দিকে। অন্য দিকে রাজনৈতিক কারণ ও সুযোগশুবিধা বঞ্ছিতরা মেতে ওঠেন নানা প্রোপাগান্ডায়। ফলে নিন্দার ডালপালা গজিয়ে মহীরুহে পরিনত হতে থাকে। তবে এসব নিন্দার সবগুলি নিছক নিন্দাও নয়। দুদক অব্দি পৌছে যায় কিছু অনিয়মের খবর। মামলাও হয় আদালতে। এ ভাবে চলে ষোলো বছর। অবশেষে সীমানা সংক্রান্ত আইনী জটিলতা নিরশনের পর ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় এই পৌর সভার দ্বিতীয় বারের নির্বাচন। স্মরণকালের সেরা এই নির্বাচনে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে আব্দুল বাতেন আবারও জনগণের ম্যান্ডেট অর্জণ করতে সক্ষম হন। ইতিমধ্যে ২০০৪ সালে তিনি বেড়া পৌর সভাকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে সক্ষম হন। একক প্রচেষ্টায় দৃষ্টিনন্দন বেড়া পৌর ভবন নির্মাণ করে তিনি বেড়ার ইতিহাসে স্থায়ী আসন গাড়তে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি নিজেকে শুধু বেড়া পৌর সভার মেয়রের গন্ডির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ করেননি বরং মিউনিসিপাল এ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ এর নেতৃত্ব অর্জণ করতেও সক্ষম হন। টানা পনেরো বছর এই সংগঠনের সভাপতির দায়ীত্ব পালন করেন।
দুই দশকের বেশী সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে তিনি অনেকটাই আত্মঅহংকারী হয়ে ওঠেন। শুধু বেড়া নয় বরং গোটা জেলার নেতৃত্ব হাতের মুঠোয় নেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালান বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। সরকারী আমলাদের সাথেও অসৌজন্যমুলক আচরণের বিস্তর অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এসব অভিযোগের দুএকটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সাময়ীক বরখাস্থ হতে হয় স্বীয় পদ থেকে। আইনী লড়াই শেষে স্থানীয় সরকারে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পুর্ব পদ ফিরে পেলেও রাজনৈতিক দলীয় পদ থেকে তিনি এখনও বঞ্ছিত রয়েছেন। তবে একথাও সত্য, শত সমালোচনার পরেও সুবিশাল পৌরকর্মযজ্ঞ দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য আব্দুল বাতেনের বিকল্প এখন পর্যন্ত তেমনটি নজরে আসেনা। একটানা দুই দশকের বেশী সময় ক্ষমতায় থেকে তিনি তার অভিজ্ঞতার ভান্ডার কানায় কানায় পুর্ণ করতে সক্ষম হয়েছেন। নানাবিধ কারণে বর্তমান পৌরপিতা বেড়া পৌরসভার জন্য অনেকটাই অপরিহার্য হয়ে পরেছেন। পাশাপাশি দুর্ণীতি, অনিয়ম ও আত্ম অহমিকায় হিসাবের ফর্দটাও বেশ খানিক লম্বা করে ফেলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
