ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বের ২০২৪ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনুসের যে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং তার জ্ঞান, তার যে পান্ডিত্ব, আমাদের ধারণা ছিল তার সেই জ্ঞান, পান্ডিত্ব এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশকে দ্রুত গতিতে অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে দিবেন। কিন্তু চার মাসে সেটা কিছুটা হোচট খেয়েছে। কিন্তু আমরা হতাশ হতে চাই না, আমরা আশাহীন হতে চাই না, আমরা আশা রাখতে চাই। যেহেতু এই সরকারকে আমরা সকলে সমর্থন দিয়েছি, আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশের ৫৩ বছরে এইরকমের রাজনৈতিক ঐক্যমত তৈরী হয়নি। যেটা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশ্নেই তৈরি হয়েছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন ।
এসময় তিনি আরো বলেন, এবছরের বিজয় দিবসটি অত্যন্ত আনন্দক্ষণ এবং উৎসবের সাথেই পালন করছি। কারণ আমরা দেখেছি যে গত দেড় দশকের যে কর্তৃত্ববাদী শাসন আমাদের ঘারের উপর চেপে বসেছিল। শহীদ মিনারে কিংবা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেও অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত ব্যক্তিবর্গরা লাঞ্চিত হয়েছেন। নানাভাবে নাজেহাল হয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছোট-বড় সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে কিন্তু রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করেছে। প্রধান উপদেষ্টা এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি যখন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, আমাদের বিদেশী মেহমান পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আমরা সে সময় উপস্থিত ছিলাম।
ভিপি নূর বলেন, এইবারের বিজয় দিবসকে বিশেষ করে মনে করি, যেহেতু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন, শোষনমূক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রকে নির্মাণ করা। ২০২৪ এসেও কিন্তু সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কিন্তু তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলন করতে হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে গত ৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা পূরণ হয়নি। যার কারণে কিন্তু এখন গোটা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের একটা জুড়ালো দাবী উঠেছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, আশা করি তারা জন আকাঙ্খাকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে নূর বলেন, চার মাসে আসলে একটা সরকারকে মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট সময় নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের এই ধরণের পরিস্থিতি বোধয় গত ৫৩ বছরে ফেস করেনি। যে একটা সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে একটা সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সেটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি যে মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেম পর্যন্ত পালিয়ে যায়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব সাহেবও পালিয়ে গেছেন। এইভাবে রাষ্ট্রকে এরকম একটা ভঙ্গুর ব্যবস্থায় নিয়ে গেছিলেন। কাজেই সেখান থেকে রাষ্ট্রকে একটা সঠিক জাগিয়ে তুলতে কিছুদিন সময়ের প্রয়োজন হয়।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করবে কিংবা বাংলাদেশে থাকবে তাদের কিন্তু ৭১ মেনে এবং ৭১ কে সম্মান করে আমাদের এই অস্তিত্বের জায়গায় কোনভাবেই আমরা কম্প্রোমাইজ করবো না। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি এই ৫৪ বছরেও এখনো আমাদের দেশে ৭১ এর পরাজিত শক্তির তৎপরতা আছে। বিশেষ করে যেটা আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেখেছি যে, জাতিকে বিভক্ত করে রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিপক্ষের শক্তি নামে নানানভাবে ট্যাগ দেয়া হতো। কারণ যদি আমি মনে করি যে ৫৪ বছরে এখন আর স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বলে কিছু নাই। যারাই বাংলাদেশে আছে সকলেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সালের বিজয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশে জনগণ প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ অনুভব করছে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। একইসঙ্গে ফ্যাসিজম ও আধিপত্যবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ও জানান তিনি।