ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ২৯ ডিসেম্বের ২০২৪ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ চীন, এক সময় ‘এক পরিবার, এক সন্তান’ নীতি প্রয়োগ করেছিল, তবে বর্তমানে চীন সরকারের নতুন পরিকল্পনা সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
দেশটির সরকার তরুণদের সন্তান জন্মানোর দিকে আগ্রহী করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমানে চীনে সন্তান নেওয়ার হার কমে যাওয়ার কারণে চীন সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রণোদনা এবং উৎসাহমূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বয়স বাড়ছে, তরুণ কমে যাচ্ছে
চীনের ১৪০ কোটি জনগণের মধ্যে বর্তমানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তরুণদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চীন সরকার বুঝতে পারছে, এ সমস্যা দূর করতে এবং অর্থনীতি সচল রাখতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
তাই, সরকারের তরফ থেকে শিগগিরই নানা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সন্তানের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রদান।
বাড়ি বাড়ি ফোন করে সন্তান নেওয়ার জন্য উৎসাহ দেওয়া
চীনের স্থানীয় সরকার এবার পরিবারের প্রতি সরাসরি যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। বিবাহিত নারীদের ফোন করে তাদের সন্তান ধারণের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হচ্ছে এবং সন্তান নেওয়ার জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার জন্য ১৪ হাজার ডলার পর্যন্ত সহায়তা প্রদান করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও, চীনের কিছু অঞ্চল সরকারি স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য পরিসেবা বিনামূল্যে প্রদান করছে।
প্রেম, বিয়ে, সন্তান ধারণে সচেতনতা প্রচার
চীন সরকার আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রেম শেখানোর কোর্স’ চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে তরুণদের প্রেম, বিয়ে এবং সন্তান ধারণের উপকারিতা ও গুরুত্ব শেখানো হবে। এতে তরুণদের মধ্যে সম্পর্কের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব এবং ভবিষ্যতে পরিবার গঠনে আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এছাড়া, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো নিয়মিতভাবে সন্তান জন্মানোর উপকারিতা নিয়ে প্রকাশনা করছে। পিপলস ডেইলি এবং লাইফ টাইমসের মতো সংবাদপত্রে সন্তান জন্মানোর স্বাস্থ্যগত এবং সামাজিক উপকারিতা সম্পর্কে নিবন্ধ প্রকাশ করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি কিভাবে বদলাতে পারে?
যদিও চীন সরকারের উদ্যোগ অনেকটাই ইতিবাচক মনে হচ্ছে তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সহজ হবে না। দেশটিতে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সন্তানের প্রতি আগ্রহের অভাব রয়েছে, আর জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি, চাকরি এবং পড়াশোনার চাপের কারণে তাদের জন্য সন্তান ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
চীনের অর্থনীতিবিদ রেন জিপিং বলেন, চীনের তিনটি প্রধান জনসংখ্যা সমস্যা রয়েছে- বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, জন্মহার কমে যাওয়া এবং বিবাহের হার কমে যাওয়া। ফলে, সন্তান জন্মানোর হার বৃদ্ধি করার জন্য আরও দৃঢ় এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
মিশন : শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি
এই সমস্যা সমাধান করতে চীন সরকার বড় অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এতে বাবা-মাকে শিশু লালন-পালনের জন্য ভর্তুকি দেওয়া হবে এবং করছাড়ের সুবিধা থাকবে। এছাড়া, সরকার স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে তারা সঠিক বয়সে বিয়ে এবং সন্তান ধারণের গুরুত্ব বুঝিয়ে প্রচারণা চালায়।
এশিয়ার পরাশক্তি চীনের এক সন্তান নীতি থেকে পরিবর্তন
চীনে দীর্ঘ সময় ধরে ‘এক পরিবার, এক সন্তান’ নীতি চালু ছিল, যা ১৯৭৯ সালে শুরু হয়েছিল। তবে জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে ২০১৫ সালে এই নীতি পরিবর্তন করা হয় এবং দুই সন্তান নীতি চালু করা হয়। এরপর, ২০২১ সালে তিন সন্তান নীতি গ্রহণ করা হয়। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন সরকার যে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা কতটা কার্যকর হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিশেষজ্ঞ ওয়াং ফেং বলেন, ‘এটি নতুন বোতলে পুরোনো মদ, যা কার্যকর হবে না।’ অর্থাৎ, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এক সন্তান নীতি চালানোর ফলে চীনের সমাজে তার একটি সামাজিক প্রভাব তৈরি হয়েছে, যা সহজে বদলানো সম্ভব নয়।
নারী সংগঠনগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি
নারী আন্দোলনের লেখিকা শেন ইয়াং বলেন, ‘চীন সরকার যদি জনসংখ্যা বাড়াতে চায়, তাহলে তাদের বিশেষ করে একক মায়েদের জন্য আরও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সন্তান ধারণের কারণে নারীকে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তা দূর করতে হবে।’
ভবিষ্যৎ কি হবে?
চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে সরকারের নীতি এবং সামাজিক অবস্থার ওপর। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তান ধারণের হার বৃদ্ধির জন্য কেবল আর্থিক প্রণোদনা নয়, বরং সমাজের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনযাত্রার মানেরও পরিবর্তন প্রয়োজন।