অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, 09 মার্চ 2025ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): “গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৪টি লে-অফ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার প্রথম ধাপে দুটি প্রতিষ্ঠানের ২৪৫ জন শ্রমিকের পাওনা ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রথম দিন ক্রেসিন্ট এক্সেসরিজ ও ইয়েলো অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, আজ সোমবার প্রায় ১১ হাজার শ্রমিক তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পাবেন। শিল্পাঞ্চলের পুলিশ প্রশাসনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বেক্সিমকো শিল্পপার্কের অন্তর্ভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠান গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে ৩১ হাজার ৬৭৯ জন শ্রমিক এবং ১ হাজার ৫৬৫ জন কর্মচারী কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকার গত ৬ মার্চ ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার একটি চেক হস্তান্তর করে। ঋণ হিসেবে এই অর্থ হস্তান্তর করা হয় বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরীর কাছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ৯ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে।
বেক্সিমকো শিল্পপার্কের কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে মূলত ব্যাংক ঋণ সমস্যাকে দায়ী করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক ঋণ খেলাপির কারণে প্রতিষ্ঠানটির এলসি সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। এতে কাঁচামালের সংকটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে বিক্ষোভে রূপ নেয়।
সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ কমিটি গঠন করে, যেখানে নেতৃত্বে আছেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, সরকারের অর্থ সহায়তার মাধ্যমে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৩ আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এর মধ্যেই ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তার, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। এসব কারণেই অর্থ সংকটে পড়ে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলো।
বর্তমানে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের মাধ্যমে সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। শ্রমিকরা স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রমের দ্রুত পুনরায় চালুর দাবি জানাচ্ছেন।