Wednesday , April 16 2025
ব্রেকিং নিউজ
Home / Business / রোজার বাজারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্য

রোজার বাজারে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্য

অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, 09মার্চ 2025ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): রোজার বাজারের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে হয়তো আপনি থলেতে তুলে নিয়েছেন দেশীয় নানা ব্র্যান্ডের তেল, চিনি, ডাল কিংবা ময়দা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে, দেশীয় কোম্পানিগুলোর হাতেই রয়েছে পুরো বাজার। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ, এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যাদের মাধ্যমে আসছে, তাদের মূল কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কিছু বহুজাতিক কোম্পানি।

এবারের রোজার বাজারে এই সরবরাহ ব্যবস্থায় সবচেয়ে এগিয়ে ইউরোপের দুটি প্রতিষ্ঠান—সুইজারল্যান্ডের লুইস ড্রেইফাস কোম্পানি (এলডিসি) ও নেদারল্যান্ডসের ভিটেরা। বন্দর দিয়ে খালাস হওয়া আমদানি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই দুই কোম্পানি রোজার সময় বাংলাদেশে আসা নিত্যপণ্যের ১৮ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করেছে, যা চীন, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকেও পিছনে ফেলেছে।

গত তিন মাসে সুইজারল্যান্ডের এলডিসি বাংলাদেশে ২৩ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য সরবরাহ করেছে, যা মোট আমদানির ৯.২৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করেছে ছোলা, মসুর ডাল, গম, সয়াবিন তেল, সয়াবিন বীজ ও চিনি। তবে এসব পণ্য তারা সরাসরি সুইজারল্যান্ড থেকে আনেনি, বরং আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, উরুগুয়ে, ইউক্রেন, প্যারাগুয়ে ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করেছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের ভিটেরা, যারা ৩ লাখ ৮০ হাজার টন পণ্য সরবরাহ করেছে এবং এতে তাদের আয় হয়েছে ২২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। প্রতিষ্ঠানটি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন তেল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন বীজ, অস্ট্রেলিয়া থেকে মসুর ডাল এবং কানাডা থেকে মটর ডাল সরবরাহ করেছে।

সিঙ্গাপুর, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানও বাজারে সক্রিয় ছিল। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রোকর্প, যারা ১৯ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য সরবরাহ করেছে। একই দেশ থেকে উইলমার ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলারের এবং চীনের কফকো ৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের পণ্য সরবরাহ করেছে।

এদিকে, কৃষিপণ্য সরবরাহে বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল ও আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ড (এডিএম) এবারের রোজার বাজারে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কার্গিল ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের ব্যবসা করে ১২তম স্থানে, আর এডিএম ৪ কোটি ২৫ লাখ ডলারের ব্যবসা করে ১৫তম স্থানে অবস্থান করছে।

এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মূলত কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করে, শস্যগুদামে মজুত রাখে এবং সময়মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করে। পণ্য সংগ্রহ থেকে সরবরাহ পর্যন্ত পুরো চক্রে রয়েছে তাদের বিপুল বিনিয়োগ, যা কৃষি উৎপাদন, বন্দরসেবা ও সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনেও ছড়িয়ে আছে।

 

বাংলাদেশে এই কোম্পানিগুলোর মূল ক্রেতা হচ্ছে দেশীয় বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী, যারা জাহাজভর্তি পণ্য আমদানি করে বাজারে সরবরাহ করে। এ প্রসঙ্গে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, “বিশ্বের কৃষিপণ্য সরবরাহের বাজার মূলত ইউরোপ ও আমেরিকার বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির দখলে। গুণগত মান ও সরবরাহের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারায় এসব কোম্পানি থেকে পণ্য আমদানি বেশি হয়।”

 

এবারের রোজায় বাজারের পেছনের এই বাস্তবতা চোখে পড়ার মতো। দেশীয় কোম্পানির লেবেলযুক্ত পণ্যগুলোও বহুজাতিক সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে আসছে, যা প্রমাণ করে যে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বাংলাদেশ এখন কতটা সংযুক্ত।

 

 

 

About Anisur rahman Raju

চেক

ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা নিয়ে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, ব্যাংকের চাপ বাড়ছে

অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২৭মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): আগামী মাস থেকে দেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *