খেলাধুল ডেস্ক, 10 মার্চ 2025ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট):ম্যাচ শেষ, স্টাম্প হাতে রোহিত শর্মা ও লোকনৃত্যে মেতে উঠলেন। ভারতের গুজরাট অঞ্চলে নবরাত্রির সময় এই নৃত্য বেশ জনপ্রিয়। দূর থেকে দেখতে মনে হতে পারে যেন দুজন তলোয়ারযুদ্ধে নেমেছেন, কিন্তু সেটা ছিল জয় উদ্যাপনেরই অভিনব রূপ। ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত যেভাবে দাপট দেখিয়েছে, সেটার প্রতিচ্ছবিও যেন মেলে ধরলেন তাঁরা। হাসিমুখে স্টাম্পের লড়াইয়ে মেতে উঠল পুরো দলও, যেন ইঙ্গিত করল কতটা সহজে তারা ম্যাচ জিতেছে।
মাঠে তখন এক আবেগঘন মুহূর্তের জন্ম দিলেন বিরাট কোহলি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দের মাঝেই এগিয়ে গিয়ে মোহাম্মদ শামির মায়ের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিলেন তিনি। এর পরপরই শামি, তাঁর পরিবার এবং দলের আরও কয়েকজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তুললেন। সবার আবদার মেটাতে যেন বিন্দুমাত্র ক্লান্তি ছিল না তাঁর মধ্যে। ভারতের টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা এখন কোহলির ঝুলিতে—২০২৩ বিশ্বকাপ হাতছাড়া হলেও, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘরে তুলল তারা। এমন অভিজ্ঞতার পর কোহলির আত্মবিশ্বাস যে রাজার মতো হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
একজন প্রকৃত নেতা দলকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে রেখে সরে দাঁড়াতে চান। কোহলিও মনে করেন, ভারতীয় দল এখন এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে তারা বিশ্বের যেকোনো প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর ভাষ্য ছিল, “এই দল আগামী আট বছর ধরে বিশ্ব ক্রিকেটে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে।”
জাতীয় দলে তাঁর ১৭ বছরের পথচলা চলছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে ভারতের দল যেমন ছিল, তার চেয়ে বর্তমান দল অনেক বেশি সুসংগঠিত, অনেক বেশি প্রতিভাবান। কোহলি এই দলটিকে দেখে আশ্বস্ত বোধ করেন, কারণ তিনি জানেন, ভারতের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও পারফরম্যান্স শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তিনি শুবমান গিল, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়ার মতো খেলোয়াড়দের দাহরণ দিয়ে বলেছেন, কীভাবে তারা দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে পরাজয়ের পর ভারতীয় দলকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই ধাক্কা সামলে নিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতার অনুভূতি কোহলির মতে এক কথায় অসাধারণ। এই জয়ে যেন সেই অতীত পরাজয়ের ক্ষত অনেকটাই মুছে গেল।
বয়সের বিচারে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায় শুরু হয়ে গেছে—এমন প্রশ্ন মাঝেমধ্যেই উঠতে দেখা যায়। কিন্তু কোহলি জানেন, বিদায় বলার সময় যখনই আসুক, তখন যেন ভারতের ড্রেসিংরুম আরও শক্তিশালী থাকে। উদ্যাপনের মাঝে গিলের পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বললেন, “দলকে ভালো অবস্থানে রেখে যেতে পারলে শান্তি লাগবে। প্রতিভার অভাব নেই এখানে। আমাদের কাজ শুধু তাদের আরও শাণিত করা।”
ভারতীয় ক্রিকেটের এই অধ্যায় হয়তো কোহলির জন্য শেষের পথে, কিন্তু তার তৈরি করা ভিত ভারতকে আরও বহু বছর এগিয়ে নিয়ে যাবে—সেই বিশ্বাস তিনি রেখেই এগিয়ে চলেছেন।