অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, 17 মার্চ 2025ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেলের কাঁচামাল। আমদানির এমন রেকর্ড আগে কখনো হয়নি। তবে সরবরাহ বাড়লেও সংকট কাটছে না, বরং বাজারে দাম এখনও বেশি। বোতলজাত তেলের নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি লিটারে ৫-১০ টাকা বেশি নিতে দেখা গেছে খুচরা বিক্রেতাদের। ক্রেতারা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে।
সরকারের দেওয়া শুল্কছাড়ের সুবিধা ৩১ মার্চ শেষ হয়ে গেলে সয়াবিন তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে শুল্ক–কর কমানোর ফলে কেজিপ্রতি ৬-৭ টাকা কর দিতে হচ্ছে, যা মার্চের পর বাড়তে পারে ১৪-১৫ টাকা পর্যন্ত। এই আশঙ্কায় বাজারে মজুতদারি প্রবণতাও দেখা দিয়েছে।
গত ১৭ দিনে সাতটি শিল্পগ্রুপ বন্দর থেকে এক লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং দুই লাখ টন সয়াবিনবীজ খালাস করেছে, যা থেকে প্রায় ৩৬ হাজার টন তেল পাওয়া যাবে। সাধারণত আমদানি করা অপরিশোধিত তেল এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধন শেষে বাজারে সরবরাহ করা হয়। তবে সরবরাহ বাড়লেও সংকট কেন কাটছে না, সেই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারছেন না।
শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান TK গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলছেন, “আমদানি বাড়ছে, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ তেল বাজারে দেওয়া হচ্ছে। সংকট হওয়ার কথা নয়।” তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছেন না, যার ফলে সংকট তৈরি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের চকবাজার ও বহদ্দারহাট ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের বোতল তুলনামূলক কম। দামেও রয়েছে বিশাল পার্থক্য— বোতলে ৮৫০ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকার বেশি দামে। আবার এক লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়, যেখানে কিছুদিন আগেও ছিল ১৭৫ টাকা।
ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। চকবাজারে এক ক্রেতা নাজমুল হক বলেন, “সরকার দাম নির্ধারণ করলেও কেউ তা মানে না। বোতলের গায়ে লেখা দাম মুছে দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।” বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু দোকানে সত্যিই বোতলের গায়ে লেখা দাম মুছে ফেলা হয়েছে। তবে পরিবেশকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শুল্কছাড় ও মজুত প্রবণতা:
ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার গত বছর তিন দফায় শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশে নামায়। এতে আমদানিকৃত সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমে এলেও এই সুবিধা ৩১ মার্চের পর থাকছে না। যদি শুল্কছাড়ের সময়সীমা না বাড়ানো হয়, তবে বাজারে লিটারপ্রতি তেলের দাম ১৪-১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। এই আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা মজুতদারি শুরু করেছেন।
গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের খতিবের হাট এলাকা থেকে এক দোকান থেকে ৬,৭০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন উদ্ধার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, “বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। আমরা ডিলারদের গুদামে মজুত পেয়েছি। অভিযানের কারণে কিছুটা সরবরাহ বেড়েছে, তবে বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আরও অভিযান চালানো হবে।”
বাজারের এই অস্থিরতা নিয়ে সাধারণ মানুষের হতাশা বাড়ছে। বহদ্দারহাটে বাজার করতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমদানি বাড়ছে, শুল্ক কমেছে, তারপরও দাম কেন বেশি? আমদানি-রপ্তানির হিসাব বুঝতে পারি না, আমরা শুধু চাই স্বাভাবিক দামে তেল কিনতে।”
এদিকে, ব্যবসায়ীদের সংগঠন শুল্কছাড়ের সময়সীমা আরও বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। তবে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। শুল্কছাড়ের সুবিধা বাতিল হলে বাজারে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করে সয়াবিন তেল কিনতে হতে পারে।