খেলা ডেস্ক, 17 মার্চ 2025ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট):রাঁচির বিশ্রা মুন্ডা বিমানবন্দরে একদিন নিরাপত্তারক্ষী ফ্রান্সিস মিঞ্জের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছিলেন শুবমান গিল। তখন গুজরাট টাইটানসের অধিনায়ক ছিলেন গিল, আর ফ্রান্সিসের ছেলে রবিন মিঞ্জ ঠিক সেসময় আইপিএলের নিলামের অপেক্ষায় ছিলেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সেই নিলামেই রবিন প্রথমবারের মতো আইপিএলে জায়গা করে নেন, যখন গুজরাট টাইটানস ৩ কোটি ৬০ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায়। বাবার সঙ্গে গিলের কথোপকথনের অর্থ তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু ফ্রান্সিসের স্বপ্ন এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা এই মানুষটির স্বপ্ন ছিল একদিন তাঁর ছেলেও জাতীয় দলের হয়ে বিমানবন্দরে যাতায়াত করবে, যেমনটা করেন বড় তারকারা। তবে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য পেরোতে হবে অনেক ধাপ, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইপিএলে ভালো করা। ২০২৩ আইপিএলে সেটাই ছিল রবিনের প্রথম বড় মঞ্চ, যেখানে নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি। গুজরাট টাইটানসের হয়ে মাঠে নামার আগেই এক ভয়ংকর দুর্ঘটনার শিকার হন এই তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। নিজের কাওয়াসাকি বাইক চালানোর সময় অন্য একটি বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন রবিন। ফলে পুরো মৌসুম থেকেই ছিটকে যান, আর তাঁর জায়গায় গুজরাট দলে সুযোগ পান বিআর শরথ।
যদিও আইপিএলে খেলার স্বপ্ন এক মৌসুমের জন্য থমকে গেলেও হার মানেননি রবিন। তাঁর পারফরম্যান্স এবং প্রতিভা এতটাই নজর কেড়েছিল যে, ২০২৪ সালের মেগা নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস তাঁকে ৬৫ লাখ রুপিতে দলে ভেড়ায়। এবার আর কোনো বাধা নেই, মুম্বাইয়ের হয়ে আইপিএলের ২২ মার্চ শুরু হতে যাওয়া মৌসুমেই মাঠে নামার অপেক্ষায় আছেন তিনি। আর যেদিনই তিনি আইপিএলে অভিষেক করবেন, সেদিনই সৃষ্টি হবে এক নতুন ইতিহাস। কারণ রবিন মিঞ্জ হতে যাচ্ছেন আইপিএলে খেলা প্রথম আদিবাসী ক্রিকেটার।
ঝাড়খন্ডের রাঁচিতে জন্ম নেওয়া রবিন মিঞ্জ ছোটবেলা থেকেই ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তি মহেন্দ্র সিং ধোনির বড় ভক্ত। ধোনির মতোই তিনি বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে পারেন, উইকেটকিপিংয়েও বেশ পারদর্শী। তবে ধোনির চেয়ে তাঁর ব্যাটিং শৈলী আরও বেশি বিস্ফোরক, যার কারণে স্থানীয় ক্রিকেটে তিনি পরিচিত ‘রাঁচির ক্রিস গেইল’ নামে। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ তাঁকে আরও বড় করে ‘ঝাড়খন্ডের ক্রিস গেইল’ বলেও ডাকেন। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৮১.০৮, যা প্রমাণ করে কতটা বিধ্বংসী ব্যাটার তিনি।
আইপিএলের গত মৌসুমে খেলতে না পারার হতাশা এবার ঘোচাতে চান রবিন। মুম্বাই ইন্ডিয়ানস তাঁকে ঈষান কিষানের জায়গা পূরণ করার জন্য প্রস্তুত করছে, যেখানে তাঁর বড় ভূমিকা থাকবে। বাবার স্বপ্নও ধীরে ধীরে পূরণের পথে। মুম্বাইয়ের হয়ে মাঠে নামার পর হয়তো একদিন সেই বিমানবন্দরেই ভারতীয় জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরবেন রবিন, যেমনটা তাঁর বাবা বহুদিন ধরে কল্পনা করে আসছেন।
২০২৩ সালে রবিনের হতাশাজনক চোটের পর তাঁর বাবা ফ্রান্সিস টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন, “আমরা শুধু চাই রবিন আবার সুযোগ পাক। সে ২০ বা ৩০ লাখ রুপিতেও বিক্রি হলেও আমরা খুশি থাকতাম। কারণ পতনের পর উঠে দাঁড়ানোর আনন্দই সবচেয়ে বেশি।”
এবার সেই পতনের পর আবার উঠে দাঁড়ানোর গল্প লিখতে চলেছেন রবিন মিঞ্জ। তারুণ্যের ঝলক, ব্যাটিংয়ে আগ্রাসন আর অদম্য মানসিকতা নিয়ে তিনি আইপিএলের আসরে নিজের নাম খোদাই করতে প্রস্তুত।