Tuesday , April 22 2025
ব্রেকিং নিউজ
Home / জরুরী সংবাদ / লুৎফুন নাহার লতা: জনপ্রিয়তার শিখর থেকে এক সংগ্রামী জীবনের পথে

লুৎফুন নাহার লতা: জনপ্রিয়তার শিখর থেকে এক সংগ্রামী জীবনের পথে

বিনোদন ডেস্ক, 18মার্চ 2025ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট):লুৎফুন নাহার লতা—বাংলাদেশের নাট্যজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যাঁর অভিনয় আশির দশকে লাখো দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল। ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘চর আতরজান’-এর মতো নাটকে তাঁর অসাধারণ অভিনয় আজও মানুষ ভুলতে পারেনি। কিন্তু বিনোদনজগতের এই জনপ্রিয় মুখ হঠাৎ করেই অন্তরালে চলে যান। ১৯৯৭ সালে তিনি দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে শুরু হয় এক নতুন লড়াই।

অনেকে ভাবতে পারেন, হয়তো তিনি স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় আরামে দিন কাটিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল একেবারে উল্টো। নিউইয়র্কের মাটিতে তাঁর সংগ্রামের শুরুটা ছিল কঠিন। একা মা হিসেবে পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে নতুন দেশে এসে তাঁকে চরম অর্থকষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। এমন দিনও গেছে, যখন ঘরে খাবার ছিল না, মাটির ব্যাংকের মতো একটি বড় কাপের মধ্যে খুচরো টাকা জমিয়ে বাজার করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল, দুঃখ চিরস্থায়ী নয়, চেষ্টা করলে পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব।

বাংলাদেশে থাকাকালীন লতা একজন ব্যাংকারও ছিলেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এসে নতুন করে ক্যারিয়ার গড়তে হয়। ব্যাংকের চাকরির পাশাপাশি সন্তানকে সময় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় তিনি নতুন পথ খোঁজেন। নিউইয়র্ক বোর্ড অব এডুকেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাবলিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ধাপে ধাপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য কাজ করতে থাকেন।

ব্যক্তিজীবনে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন লুৎফুন নাহার লতা। প্রথম স্বামী নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একাই সন্তানকে বড় করেছেন। পরে তিনি মার্কিন নাগরিক মার্ক ওয়াইনবার্গকে বিয়ে করেন, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। তবে নিজের অতীত নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর। তিনি মনে করেন, মানুষ ভুল করতেই পারে, কিন্তু সেই ভুলকে ক্ষমা করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় শক্তি।

নিউইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও লতার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে। একসময় নিজেই গাড়ি চালিয়ে টেলিভিশন স্টুডিওতে যেতেন, রেডিওতে সংবাদ পড়তেন, সেই সব স্মৃতি আজও তাঁকে নস্টালজিক করে তোলে। তিনি মনে করেন, সুখ মানে বড় বাড়ি বা গাড়ি নয়, বরং নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করাই প্রকৃত সুখ। একা মা হিসেবে তিনি সন্তানের জন্য যা করেছেন, সেটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তাঁর ছেলে এখন নিউইয়র্ক ডিপার্টমেন্ট অব ল’-এর একজন সফল আইনজীবী, যা তাঁকে গর্বিত করে।

লুৎফুন নাহার লতার জীবন কেবল একজন অভিনেত্রীর গল্প নয়, এটি এক সংগ্রামী নারীর গল্প। যিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেও জীবনযুদ্ধে নেমেছেন, লড়াই করে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর গল্প প্রমাণ করে, প্রতিকূলতা যত কঠিনই হোক, যদি মনোবল দৃঢ় থাকে, তাহলে জীবনকে নতুনভাবে  সম্ভব।

 

About Anisur rahman Raju

চেক

ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা নিয়ে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, ব্যাংকের চাপ বাড়ছে

অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২৭মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): আগামী মাস থেকে দেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *