ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, 18 মার্চ 2025ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট:যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একসময় ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তুলসী গ্যাবার্ড। তবে দল বদলের মাধ্যমে তিনি রিপাবলিকানদের শিবিরে যোগ দেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে মনোনীত করেন। সিনেটের অনুমোদন পাওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন তুলসী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে এ পদে অধিষ্ঠিত হলেন।
রাজনীতির মঞ্চে তুলসীর পথচলা বেশ বৈচিত্র্যময়। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ছিলেন এবং ২০২০ সালে নিজ দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য লড়াই করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পরে ২০২২ সালে ডেমোক্র্যাটদের ত্যাগ করেন এবং অভিযোগ করেন যে দলটি যুদ্ধবাজদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এরপর রিপাবলিকান দলে যোগ দিয়ে দ্রুতই ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচার অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। এমনকি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে বিতর্কের প্রস্তুতি নিতেও ট্রাম্পকে সহায়তা করেছিলেন।
তবে তুলসীর গোয়েন্দা সংক্রান্ত কোনো সরাসরি অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হওয়া নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। রিপাবলিকান দলের অনেকেই এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পাশাপাশি প্রায় ১০০ জন সাবেক কূটনীতিক, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাঁর নিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবুও শেষ পর্যন্ত সিনেটের অনুমোদন পেয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তাঁর কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়কে পরিচালনা করা, ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধান করা এবং প্রেসিডেন্টসহ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলকে প্রয়োজনীয় গোয়েন্দা পরামর্শ প্রদান করা। তাঁর অধীনে কাজ করবে সিআইএ, এফবিআই, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও মহাকাশবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগসহ মোট ১৮টি সংস্থা।
তুলসীর অতীত জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি দীর্ঘ দুই দশক যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন। ইরাক ও কুয়েতে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং প্রতিনিধি পরিষদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটিতেও ছিলেন। যদিও সরাসরি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁর নেই, তবে সামরিক বাহিনীতে কাজের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই পদে সফল হতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে তুলসীর কোনো পারিবারিক সম্পর্ক নেই, তবে তাঁর মা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং সব সন্তানকে হিন্দু নাম দিয়েছিলেন। তিনি নিজেও হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেন এবং ২০১৩ সালে কংগ্রেস সদস্য হওয়ার সময় ভগবত গীতা হাতে শপথ নিয়েছিলেন। মার্কিন কংগ্রেসের ইতিহাসে তিনি ছিলেন প্রথম হিন্দু সদস্য।
ট্রাম্প প্রশাসনে কাজ করা নিয়ে তুলসী নিজেও উচ্ছ্বসিত। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পরমাণু যুদ্ধ ঠেকানোর জন্য আমি যদি কোনোভাবে ভূমিকা রাখতে পারি, তবে তা হবে আমার জন্য সম্মানজনক।” তাঁর এই বক্তব্যই ইঙ্গিত দেয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চান।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তুলসীর কার্যক্রম কেমন হবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে ট্রাম্পের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পেরে তিনি যে সন্তুষ্ট, তা তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট। এখন দেখার বিষয়, তিনি এই পদে কতটা সফল হন এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের জন্য কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।