রাজনৈতিক ডেস্ক, ২১ মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): সরকার নির্বাচন নিয়ে দুটি সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে এবং নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিত সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বৃহত্তর সংস্কারপ্রক্রিয়া প্রয়োজন হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করা হবে। তবে, কোনো পরিস্থিতিতেই নির্ধারিত সময়ের বাইরে নির্বাচন যাবে না বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতির বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট করেছেন যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে, দলের মধ্যে যেসব নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া চলবে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করার বিষয়টি এখনো আলোচনার টেবিলে রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোনো ধরনের দাবির মুখেও ভোটগ্রহণের সময় পরিবর্তন করা হবে না। ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী কাঠামো চূড়ান্ত করতে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা হচ্ছে, যা অতি শিগগিরই স্বাক্ষরিত হবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নেতা আতাউল্লাহর গ্রেপ্তারকে সরকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তাঁরা রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরাকান আর্মির সঙ্গে আরও কার্যকর সংলাপ চালানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষে। তবে, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের একটি বড় অংশ ভারতীয় গণমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ছড়ানো অপপ্রচারের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। ড. কমফোর্ট ইরো, যিনি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর সংস্থা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
সার্বিকভাবে, সরকার নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।