অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২১ মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): দেশের পোশাকশিল্প খাতে বড় একটি পরিবর্তন আনতে ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত গ্লোরি টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস কারখানা কিনে নিয়েছে শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপ। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের ফলে কারখানাটি নতুনভাবে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে, যা আগামী মাসে পুরোদমে উৎপাদনে ফিরবে বলে জানা গেছে।
ভালুকায় ৩৬ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা গ্লোরি টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস নানা কারণে আর্থিক সংকটে পড়ায় কারখানাটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। দর-কষাকষির পর ডিবিএল গ্রুপ এটি কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় এবং গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে কারখানার মালিকানা হস্তান্তর করা হয়। ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম জানান, এটি একটি নিট কম্পোজিট কারখানা, যেখানে ৩৬টি তৈরি পোশাক উৎপাদন লাইন, নিটিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি ইউনিট রয়েছে। এখান থেকেই তারা আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির জন্য পোশাক উৎপাদন করবে।
ডিবিএল গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্লোরি গ্রুপের অধীনে থাকা অবস্থায় কারখানাটিতে প্রায় ১,১০০ কর্মী কাজ করতেন, যাদের সবাইকে নতুন পরিচালনায় নিয়োগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন শ্রমিকও নিয়োগ করা হবে। পুরোপুরি চালু হলে কারখানাটি প্রায় ৫,০০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
গ্লোরি টক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস ২০১৭ সালে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যপদ লাভ করে এবং এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কারখানার আয়তন ৪,৮০,০০০ বর্গফুট। প্রতিদিন এক লাখ পিস পোশাক উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও, অতীতের আর্থিক সংকটের কারণে কারখানাটি পুরো সক্ষমতা অনুযায়ী পরিচালিত হয়নি।
ডিব এল গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছিল তিন দশক আগে যুক্তরাজ্যে মাত্র ৩,০০০ পিস পোলো শার্ট রপ্তানির মাধ্যমে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি দেশের পঞ্চম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৬ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ৫৮টি দেশে তাদের পণ্য পৌঁছেছে। নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের সরাসরি পণ্য বিক্রির পথও ডিবিএলের হাত ধরে উন্মুক্ত হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি ডিবিএল গ্রুপ তাদের ব্যবসা বহুমুখীকরণ করেছে। টেক্সটাইল, ওয়াশিং, প্যাকেজিং, সিরামিক টাইলস, তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, ড্রেজিং ও ওষুধশিল্পেও তাদের কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ২৪টি কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রায় ৪৭,০০০ কর্মী কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক লেনদেন প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
গত সোমবার ডিবিএল গ্রুপের করপোরেট কার্যালয়ে মালিকানা হস্তান্তর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ডিবিএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার, ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাদেরসহ প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম জানিয়েছেন, নতুন এই কারখানায় চলতি বছরে তারা ৫ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং আগামী বছরে তা ১০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে ভালো ক্রয়াদেশ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি ৬০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিবিএল গ্রুপের এই নতুন বিনিয়োগ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে এবং কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।