অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২২মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের আনন্দে নতুন নোটের এক আলাদা গুরুত্ব থাকে। শিশুদের হাতে চকচকে নতুন টাকা তুলে দেওয়ার যে রীতি বহু বছর ধরে চলে আসছে, এবার সেই উৎসবের রং কিছুটা ফিকে হতে পারে। কারণ, এবারের ঈদে বাজারে নতুন নোট ছাড়ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে পুরোনো ও ব্যবহার হওয়া নোটেই সালামি দিতে হবে, যা অনেকের জন্যই মন খারাপের কারণ হয়ে উঠেছে।
ঈদের আগে ব্যাংকে গিয়ে নতুন নোট সংগ্রহ করা অনেকের জন্য রীতিমতো একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আবদুল্লাহ আল মামুনের মতো অনেকেই ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই নতুন টাকা সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু এবার ব্যাংকের একাধিক শাখায় ঘুরেও নতুন নোট পাননি তিনি। তার মতো অনেকেই এখন চিন্তায়, কীভাবে শিশুদের বোঝানো যাবে যে এবার চকচকে নতুন নোটের বদলে হাতে আসবে পুরোনো ও কিছুটা মলিন টাকা।
শিশুদের মধ্যে ঈদের সালামির প্রতি যে আগ্রহ থাকে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেউ কেউ তো ঈদের সময় বাইরে বেড়াতেও যেতে চায় না, শুধু সালামি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে। আট বছরের রায়ানকে তার পরিবার এবারের ঈদে মালদ্বীপ ভ্রমণে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সে একরকম বেঁকে বসেছে। তার যুক্তি, বেড়াতে গেলে তো ঈদের সালামি পাবে না!
কেন নেই নতুন নোট?
প্রতিবছর ঈদের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট সরবরাহ করে, যা পরে পুরোনো নোটের বদলে বাজারে আসে। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ঈদের আগে বাজারে ছাড়া হয়। তবে এবার বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ মার্চ এক নির্দেশনায় জানায়, নতুন নোট বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। ব্যাংকের শাখায় যেসব নতুন নোট মজুত আছে, সেগুলোও বাজারে ছাড়া যাবে না।
এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসেবে জানা গেছে, নতুন নোটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকার কারণে কিছু মহলের আপত্তি ছিল। তাই নতুন নোট বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং আগামী মাসে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না থাকলেও থাকবে কিছু নতুন স্থাপনার ছবি।
নতুন নোটের কালোবাজারি
নতুন নোট বিতরণ বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও। মতিঝিল ও গুলিস্তানের নোট ব্যবসায়ীদের কাছে নতুন নোট পাওয়া গেলেও দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ১০ টাকার একটি বান্ডিল, যার মূল্য ১,০০০ টাকা, সেটিই বিক্রি হচ্ছে ১,৪৫০ থেকে ১,৫০০ টাকায়। গত বছর যা ১,২০০ টাকায় পাওয়া যেত। ২০ টাকার নতুন নোট কিনতে গেলে আরও বেশি গুনতে হচ্ছে, বান্ডিলপ্রতি বাড়তি খরচ প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
যারা ঈদ সালামি দেওয়ার জন্য নতুন নোটের আশায় ছিলেন, তারা এখন বিকল্প পথ খুঁজছেন। কেউ কেউ বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহার করা নোট জোগাড়ের চেষ্টা করছেন, কেউ আবার ভাবছেন, এবারই হয়তো পুরোনো নোটেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তবে পুরোনো নোট পেয়ে শিশুদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেটি নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় অভিভাবকেরা।
নতুন নোট কবে আসবে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগামী এপ্রিল-মে মাসে নতুন নোট বাজারে ছাড়া হবে। তবে এটি হবে সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের, যেখানে আগের মতো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি থাকবে না। বরং নতুন নকশায় যুক্ত হবে বিভিন্ন স্থাপনার ছবি, যার মধ্যে “জুলাই বিপ্লব” নামের একটি গ্রাফিতি থাকবে।
এবার ঈদের সালামি কী হবে?
বাংলাদেশে ঈদ মানেই নতুন নোটের কদর। কিন্তু এবার সেই রীতি ভাঙতে হচ্ছে। ঈদের আনন্দ তো কেবল নতুন নোটেই নয়, বরং প্রিয়জনদের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসাতেই। নতুন নোট না থাকলেও ঈদের সালামি যে পুরোনো রীতিতেই চলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিভাবকদের এবার শিশুকে বোঝাতে হবে, টাকা নয়, সম্পর্কটাই বড়—ঈদের আসল আনন্দ তো এখানেই!