খেলা ডেস্ক, ২২মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট):আর্জেন্টিনার জন্য উরুগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই ম্যাচ ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। দলের দুই প্রধান আক্রমণভাগের তারকা লিওনেল মেসি ও লাওতারো মার্তিনেজ না থাকায় শক্তির জায়গায় কিছুটা ঘাটতি ছিল। তবে সেটার প্রভাব পুরো দলের পারফরম্যান্সে খুব বেশি পড়েনি। বিশেষ করে রক্ষণভাগ ও মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণেই জয় এসেছে।
গোলপোস্টের নিচে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ বেশ নির্ভরযোগ্য ছিলেন। যদিও তাঁকে খুব বেশি পরীক্ষা দিতে হয়নি, প্রথমার্ধে উরুগুয়ের এক ডিফেন্ডারের বিপজ্জনক আক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়েছেন। বল বিতরণেও যথেষ্ট নির্ভুল ছিলেন তিনি, সতীর্থদের কাছে বল পৌঁছাতে সফল হয়েছেন বেশির ভাগ সময়।
রাইটব্যাক হিসেবে নাহুয়েল মলিনার দিনটি সহজ ছিল না। উরুগুয়ে বেশ কয়েকবার তাঁর পাশ দিয়ে আক্রমণ গড়ার সুযোগ পেয়েছে, যা সামলাতে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁকে। তবে আক্রমণে উঠে দুবার গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। অন্যদিকে, রক্ষণভাগে ক্রিস্টিয়ান রোমেরো খুব বেশি পরীক্ষায় পড়েননি, প্রতিপক্ষকেও জায়গা দেননি। তাঁর সঙ্গী নিকোলাস ওতামেন্দির কাজ ছিল দারউইন নুনিয়েজকে সামলানো, এবং তিনি সেটি বেশ ভালোভাবেই করেছেন। কয়েকবার গুরুত্বপূর্ণ ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে দলের রক্ষণকে নিরাপদ রেখেছেন।
বাঁ প্রান্তে নিকোলাস তালিয়াফিকো ছিলেন দারুণ কার্যকর। রক্ষণে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন, আক্রমণেও তেমন ভূমিকা রেখেছেন। ম্যাচের একমাত্র গোলের প্রস্তুতিতে তিনিও জড়িত ছিলেন। বল পায়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছেন, পাসিংয়েও ছিলেন নির্ভরযোগ্য।
মাঝমাঠে লিয়ান্দ্রো পারেদেস ছিলেন অসাধারণ। পুরো ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ডুয়েল জিতেছেন তিনি। প্রতিপক্ষের চাপে থেকেও বল ঠিকভাবে বিতরণ করেছেন, ফলে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকেই ছিল। ফাউলের শিকার হয়েছেন কয়েকবার, আবার প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতেও যথেষ্ট কার্যকর ছিলেন। আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টারও প্রথমার্ধে ভালো খেলেছেন, কয়েকবার উরুগুয়ের মাঝমাঠের বাধা ডিঙিয়ে আক্রমণে উঠেছেন। তবে ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে প্রতিপক্ষের চাপে তাঁকে বেশ লড়াই করতে হয়েছে।
এনজো ফার্নান্দেজের পারফরম্যান্স ছিল কিছুটা হতাশাজনক। তাঁর পাসের সফলতার হার খুব ভালো ছিল না, বেশ কয়েকটি পাস ঠিকভাবে পৌঁছায়নি। তিনটি শট নিলেও গোলমুখে রাখতে পেরেছেন মাত্র একটি। ফলে মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ গড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যর্থ ছিলেন তিনি।
আক্রমণভাগের পরিস্থিতি খুব একটা স্বস্তির ছিল না। গিলিয়ানো সিমিওনে গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন, ফিনিশিং খুব একটা ভালো হয়নি তাঁর। গোলের সুযোগ তৈরি করতেও পারেননি। অন্যদিকে, হুলিয়ান আলভারেজ নাম্বার নাইন হিসেবে খেললেও স্ট্রাইকারের ভূমিকায় সংগ্রাম করেছেন। তবে দলের একমাত্র গোলের অ্যাসিস্ট এসেছে তাঁর পা থেকে, যা তাঁর পারফরম্যান্সের অন্যতম ইতিবাচক দিক। গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন কয়েকবার, তবে শেষ মুহূর্তে সেগুলো কাজে লাগানো যায়নি।
এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত হয়েছে মূলত রক্ষণ ও মাঝমাঠের দৃঢ়তায়। আক্রমণভাগে মেসি ও লাওতারোর অভাব স্পষ্ট ছিল, কিন্তু পরিকল্পিত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে তারা উরুগুয়ের শক্তিশালী আক্রমণকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের একমাত্র গোলের সুবাদে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে আরও একটি মূল্যবান জয় তুলে নিয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।