অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২৩ মার্চ ২০২৬ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুতা কারখানাগুলোতে চলছে ব্যস্ততা। দিনরাত সমানতালে কাজ করছেন কারিগররা। কেউ সেলাই করছেন, কেউ আঠা লাগাচ্ছেন, কেউবা সোল কাটছেন, আবার কেউ রং ও ব্লক বসানোর কাজে ব্যস্ত। কারখানার ভেতর এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে, যেখানে কারিগরদের দম ফেলার সময়ও নেই।
জেলার পিও ফুটওয়্যার কারখানাগুলো এবার ১৮ থেকে ২১ লাখ জোড়া জুতা তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে। এসব জুতা বিক্রি করে ৪৫ থেকে ৬৫ কোটি টাকার আয় হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাতে তৈরি এবং আধুনিক যন্ত্রে তৈরি—দুই ধরনের জুতা উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানে ৩৮টি পিও ফুটওয়্যার কারখানা এবং ২০-২৫টি সনাতনী পদ্ধতির কারখানা রয়েছে, যেখানে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সোয়া লাখের বেশি জোড়া জুতা তৈরি হচ্ছে। শিশু, নারী ও পুরুষদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের স্যান্ডেল ও জুতা উৎপাদন করা হচ্ছে। পাইকারি দামে প্রতিটি জুতা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, ফলে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ কোটি টাকার জুতা বাজারে যাচ্ছে।
শহরতলির বিভিন্ন কারখানায় ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে কাজের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কারিগরদের অনেকেই দিনে ১৭-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করছেন। কেউ কেউ বাড়তি সহকারী নিয়োগ করেছেন কাজ সামলাতে। কারিগর মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ বললেন, “এক মাস ধরে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা কাজ করছি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন হাজার জোড়া ফাইবার সোল সিল মারতে পারি।” আরেকজন কারিগর জসিম উদ্দিন জানালেন, “ঈদের সময় প্রচুর চাপ থাকে, তাই দিনে ১৭-১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুতার কদর দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে জুতা কিনে নিয়ে যান। চাঁদপুরের ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, “আমি সারা বছর এখান থেকে জুতা কিনি। এবার ঈদ উপলক্ষে ৬০ কার্টন জুতা নিয়েছি। এখানকার জুতার মান ভালো, দামও সাশ্রয়ী।”
পিও ফুটওয়্যার কারখানার মালিক ফারুক ওসমান জানালেন, “আমাদের কারখানায় উৎপাদিত জুতার পাইকারি মূল্য ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা। আমরা মানের বিষয়ে আপসহীন, তাই সারা দেশে আমাদের জুতার চাহিদা বেশি।”
গত বছর রাসায়নিক সংকট থাকলেও এবার সেই সমস্যা নেই। বরং জেলায় নতুন কারখানার সংখ্যা বেড়েছে, যা উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করছে। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, সরকার যদি সহযোগিতা করে, তবে এখানকার জুতা আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানিকরা সম্ভব