অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২৪ মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট):দীর্ঘ দেড় বছর পর অবশেষে পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করছে ভারত। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে রপ্তানির ওপর আর কোনো শুল্ক থাকবে না। এত দিন ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন বাংলাদেশের বাজার দেশি পেঁয়াজে পরিপূর্ণ। মৌসুমের কারণে দেশীয় পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক কম। গত কয়েক মাসে আমদানিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হতো, সেখানে জানুয়ারিতে তা নেমে এসেছে ২৯ হাজার টনে, আর ফেব্রুয়ারিতে আরও কমে ২৪ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে শুল্কমুক্ত পেঁয়াজ আসার ফলে দেশের বাজারে দামের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে। একদিকে ভোক্তারা কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন, অন্যদিকে দেশীয় উৎপাদকদের জন্য এটি আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। স্থানীয় কৃষকেরা ভালো দাম না পেলে আগামী মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে নিরুৎসাহিত হতে পারেন, যা ভবিষ্যতে সরবরাহ সংকট তৈরি করতে পারে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানির খরচ ৪১ থেকে ৪২ টাকা। এর মধ্যে ৫ টাকা শুল্ক–কর দিতে হয়। শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে এই খরচ ২৬ থেকে ২৭ টাকায় নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম আরও কমবে, যা স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।
বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন জানান, এখন প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব হবে। ফলে বাজারে দামের আরও পতন ঘটতে পারে। এতে দেশি পেঁয়াজচাষিরা বিপাকে পড়বেন, কারণ তাঁদের উৎপাদন খরচও উঠবে না।
পাবনার সাঁথিয়ার কৃষক আবদুল হাই সরকার জানান, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি হালি পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। বৃষ্টির কারণে ফলন কম হওয়ায় কৃষকেরা আগেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, এখন বাজারদর কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের পেঁয়াজের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক তথ্য না থাকায় প্রায় প্রতি বছরই সংকট তৈরি হয়। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে ৩৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। তবে বাজারজাতকরণের ক্ষতি হিসাব করলে এটি প্রায় ২৯ লাখ টনে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬-২৭ লাখ টন।
এই হিসাবে দেশীয় উপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হলেও প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। গত অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ১৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তবে দেশে নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবের সুযোগ নেয় মজুতদারেরা, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে কৃষি বিভাগ চাইলে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে ভারসাম্য আনতে পারে। এখন ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানির অনুমতি রয়েছে, তবে শুল্ক প্রত্যাহারের কারণে আমদানি বাড়লে দেশীয় কৃষকেরা আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে ভোক্তারা কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারেন, আবার কৃষকেরাও তাঁদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হন।