অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২৬মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা তাদের আয় পাঠাতে বৈধ পথকেই বেছে নিয়েছেন, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে। এ কারণে রমজান মাসে প্রবাসী আয়ে নতুন একটি রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ মাসের প্রথম ২৪ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেল দিয়ে এসেছে ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার। গত ফেব্রুয়ারিতে এই পরিমাণ ছিল ২৫২ কোটি ডলার। এই ধারাবাহিকতা চললে চলতি মাসের শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছেন ব্যাংকাররা।
অর্থ পাচার কমে আসায় প্রবাসীরা তাদের আয় পাঠাতে নিরাপদ এবং বৈধ পথ বেছে নিচ্ছেন। এর ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলারের সংকট অনেকটা কমে এসেছে। আগে যে ডলারের দাম অস্থির ছিল, এখন তা শান্ত রয়েছে এবং ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ১২৩ টাকায় প্রবাসী আয় কিনছে। মার্চ মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৬৬ কোটি ডলার এসেছে, পরে ১৯ মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ২২৫ কোটি ডলারে। প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২২ মার্চ ২৪৩ কোটি ডলারে পৌঁছালে ২৪ মার্চে তা ২৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।
এটি শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, বরং প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনে ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল, যা দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার ছিল। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি ডলার এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার এসেছে। পরবর্তী সময়ে, অর্থাৎ মার্চের শেষের দিকে, এটি আরও বেড়ে গিয়ে প্রায় ১৫ কোটি ডলার দৈনিক পাঠানোর পরিমাণে পৌঁছেছে।
প্রবাসী আয়ের এই বৃদ্ধি বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ডলারের সংকট কমিয়ে দিয়েছে এবং আমদানির খরচও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বর্তমানে প্রতি ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যে রয়েছে, যা একসময় ১২৮ টাকায় উঠেছিল।
প্রবাসী আয় হচ্ছে দেশের অন্যতম বড় দায়বিহীন ডলার উৎস, যেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। এটি দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
এভাবে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতিতে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং ভবিষ্যতে রেমিট্যান্সের ওপর দেশীয় নির্ভরতা আরও শক্তিশালী হবে।