ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, ০৭ মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির ফলে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ও বহিষ্কারের অভিযান ব্যাপকভাবে জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি কংগ্রেস থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দের একটি বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউজার্সি, ফ্লোরিডা, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, মিশিগানসহ বিভিন্ন রাজ্যে অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) কর্মকর্তারা অভিযান চালাচ্ছেন। এতে বহু বছর ধরে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যেও তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
**আইনি লড়াই করেও স্থায়ী হতে পারেননি অনেকেই**
বহু অভিবাসী দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে গেলেও বৈধতার স্বীকৃতি পাননি। অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন, কেউবা নাগরিকত্বের জন্য বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। বিশেষ করে, যারা ১৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অবস্থান করছেন, তারা এখন ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
**শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত**
অভিযানের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আসলেও নানা কারণে তাদের পড়াশোনা মাঝপথে থেমে গেছে। ফলে, স্ট্যাটাস হারিয়ে তারা অবৈধ অভিবাসীতে পরিণত হয়েছেন। অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা করলেও সফল হননি।
**চাকরি ও ব্যবসায় প্রভাব**
রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান, কনস্ট্রাকশন সাইট, নিউজ স্ট্যান্ড ও ডেলিভারিম্যানদের মতো কাজে নিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আইসের (ICE) তৎপরতার কারণে অনেকেই কর্মস্থলে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া ও বোস্টনের মতো স্যাঙ্কচুয়ারি শহরেও অভিযান চলছে, যেখানে আগে কিছুটা নিরাপত্তা ছিল।
**স্যাঙ্কচুয়ারি শহরেও ঝুঁকি বৃদ্ধি**
ইতিপূর্বে, স্যাঙ্কচুয়ারি শহরগুলোর স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, উপাসনালয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইস অভিযান চালাতে পারত না। তবে বর্তমান প্রশাসন এই নিয়ম শিথিল করেছে। এসব শহর যদি গ্রেফতারে সহায়তা না করে, তাহলে ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
**বাংলাদেশিদের সংখ্যা নির্ধারণ কঠিন**
মেক্সিকো কিংবা কানাডা হয়ে বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বাংলাদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। অনেকে ভুয়া পরিচয়ে আবেদন করায় সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত থেকে বহিষ্কারের আদেশ পাওয়া অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি।
**ভয়াবহ মানসিক চাপ ও জীবনযাত্রায় প্রভাব**
– অনেক প্রবাসী তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন।
– যারা অন্যের সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর ব্যবহার করে কাজ করতেন, তারা কর্মস্থলে যাচ্ছেন না।
– ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ ও কমিউনিটি গ্রোসারিগুলোতে কর্মীর সংকট দেখা দিয়েছে।
– পরিচিত আড্ডার স্থানগুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
**নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হতাশা**
৫ মার্চ নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মহল জানায়, ক্রেতার সংখ্যা ক্রমশ কমছে। ঈদ উপলক্ষে প্রচুর পণ্য আমদানি করলেও বেচাবিক্রি আশানুরূপ হয়নি। আইসের ভয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় থাকা কিংবা অবৈধ অভিবাসীরা রেস্টুরেন্টেও ইফতারের জন্য আসছেন না।
**সেলফোনের মাধ্যমে নজরদারির শঙ্কা**
গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই সেলফোনের সিম বদলে ফেলছেন। কারণ, আইস কর্মকর্তারা ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের অবস্থান শনাক্ত করছে বলে গুজব রয়েছে।
**বাংলাদেশিদের গ্রেফতার সংখ্যা ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন**
২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কতজন বাংলাদেশি গ্রেফতার হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে কমিউনিটি ও ইমিগ্রেশন আইনজীবীদের তথ্য মতে, এই সংখ্যা ৫০ জনের বেশি নয়। অন্যদিকে, কয়েকশত বাংলাদেশি আতঙ্কে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে।
**নতুন বাজেট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা**
কংগ্রেস ৮৫ বিলিয়ন ডলারের একটি নতুন বাজেট অনুমোদন করেছে, যার বড় অংশ অভিবাসন সংক্রান্ত গ্রেফতার অভিযান চালানোর জন্য বরাদ্দ করা হবে। তবে এত বিশাল বাজেট সত্ত্বেও অনেকে মনে করছেন, এটি প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কারণ, গ্রেফতারকৃত অভিবাসীদের দেশে ফেরানোর জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ বিমান ভাড়াও ফে
ডারেল সরকারের বহন করতে হচ্ছে।