Wednesday , April 16 2025
ব্রেকিং নিউজ
Home / জরুরী সংবাদ / সন্‌জীদা খাতুন: এক আলোকিত জীবন ও সংস্কৃতির সংগ্রামী পথযাত্রা

সন্‌জীদা খাতুন: এক আলোকিত জীবন ও সংস্কৃতির সংগ্রামী পথযাত্রা

বিনোদন ডেস্ক, ২৬মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট):বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক এবং সংগীত জগতের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল জন্ম নেওয়া এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে রেখেছেন সুস্পষ্ট ছাপ। বাংলা সংস্কৃতি, সংগীত ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তিনি এক অনন্য নাম, যার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকার

জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন ও সাজেদা খাতুনের কন্যা সন্‌জীদা ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। বাবা তাঁকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘তোনালি’ নামে। সংগীতচর্চার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল সোহরাব হোসেনের কাছে, এরপর রবীন্দ্রসংগীতের তালিম নেন হুসনে বানু খানম, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলিমা সেনের মতো গুণী ব্যক্তিদের কাছে। সংগীত শুধু তাঁর পেশা বা শখ ছিল না, এটি ছিল তাঁর আত্মার অংশ।

সাংস্কৃতিক বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখা সন্‌জীদা খাতুন ১৯৬১ সালে ছায়ানট প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের মাধ্যমে ছায়ানটের পথচলা শুরু হয়, যা পরবর্তীতে বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে প্রথম বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনের সূচনা করেছিলেন তিনি এবং এরপর এটি বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

প্রগতিশীল আন্দোলনে সম্পৃক্ততা

শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। ব্রতচারী আন্দোলন ও মুকুল ফৌজের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সাংস্কৃতিক যোদ্ধা হিসেবে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখেন।

একটি সংগ্রামী জীবন

সংগীতচর্চার পাশাপাশি তিনি ইডেন কলেজ, কারমাইকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর ভূমিকা অসামান্য। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন, যা স্বাধীনতার চেতনা জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

সম্মান ও স্বীকৃতি

তাঁর কর্ম ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা পেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম, ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রভৃতি তাঁর সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক অবদানের জন্য প্রদান করা হয়েছে।

দাম্জীপত্যে বন ও পরিবার

সন্‌জীদা খাতুনের জীবনসঙ্গী ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হক। তাঁদের দাম্পত্য জীবন শুধু ব্যক্তিগত বন্ধনে আবদ্ধ ছিল না, এটি ছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁদের সন্তান অপালা ফরহাদ নভেদ, পার্থ তানভীর নভেদ ও রুচিরা তাবাসসুম নভেদ—তাঁদের পারিবারিক উত্তরাধিকারকে বহন করে চলেছেন।

অমর হয়ে থাকা এক অধ্যায়

২০২৫ সালের ২৫ মার্চ এই মহান ব্যক্তিত্ব আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তাঁর রেখে যাওয়া সংস্কৃতি, চেতনা ও মূল্যবোধ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেঁচে থাকবে। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, সৃজনশীলতা ও মুক্তচিন্তার প্রতীক। বাংলা সংস্কৃতি ও সংগীতের ইতিহাসে সন্‌জীদা খাতুন চিরকাল এক অনুপ্রেরণার নাম হয়ে থাকবেন।

 

About Anisur rahman Raju

চেক

ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা নিয়ে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, ব্যাংকের চাপ বাড়ছে

অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২৭মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): আগামী মাস থেকে দেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *