Sunday , April 20 2025
ব্রেকিং নিউজ
Home / জরুরী সংবাদ / ভারি বৃষ্টি আর পাহারি ঢলে বিপর্যস্থ দেশের নয় জেলার মানুষ

ভারি বৃষ্টি আর পাহারি ঢলে বিপর্যস্থ দেশের নয় জেলার মানুষ

ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের চট্টগ্রাম অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের নয় জেলার মানুষের জীবন। কোথাও নদীতে পানি বৃদ্ধি, কোথাও পাহাড়ি ঢলের পানি, আবার বাঁধ ভেঙে আসা পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। পানির কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি জেলা।

গত কয়েকদিন ধরে চলা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, ফেনীর মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি আগের থেকে গতকাল কিছুটা উন্নত হয়েছে বলে জানা গেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অনেক জেলার বন্যা কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পানিবন্দি মানুষের জন্য খিচুরিসহ শুকনো খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আরও দুই-তিন দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে। ভারী বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসেরও আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক ঢাকাটাইমসকে বলেন, আগামী ২ থেকে ৩ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা একই রকম থাকবে। বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নীলফামারীর তিস্তা, সুনামগঞ্জের সুরমা, বান্দরবানের সাঙ্গু, কক্সবাজারের মাতামুহুরী ও বাঁকখালী এবং চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলোতে বন্যার পানির প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও জীবনহানির কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বাড়ছে পানি। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদীপাড়ের মানুষ। তবে, ভাঙন রোধে বাঁধ সংস্কার চলছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উজানের ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলার পানি বেড়ে চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পৌরসভার নিম্নাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রেকর্ড বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলা সদরসহ, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতকসহ বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে জেলার নিম্নাঞ্চল।

টানা প্রবল বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বান্দরবানের থানচি সড়কের বলিপাড়া এলাকায় পাহাড় ধস ও সড়কের ওপর পানি ওঠায় সকাল থেকে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

রাঙামাটির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মনোঘর, যুব উন্নয়ন এলাকা, শিমুলতলী, ভেদভেদী, সনাতন পাড়া, লোকনাথ মন্দিরের পেছন সাইড, রূপনগর, আরশি নগর, টিভি সেন্টার এলাকা, আউলিয়া নগরসহ বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকটি মোবাইল টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিনিধি।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বেড়েছে। বুধবার বিকেল চারটা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা হলো ৫২ মিটার ৬০ সেন্টিমিটার।

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে লালমনিরহাটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তিস্তা-ধরলাসহ ছোট-বড় সব নদীর পানি বৃদ্ধি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে তিস্তার পানি এখনো বিপৎসীমা পার না করলেও যেকোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আতঙ্কে রয়েছে নদী সংলগ্ন চরাঞ্চলের মানুষেরা। ফলে তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নেত্রকোণায় বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে ১১ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। প্রায় ত্রিশটির মত স্কুলে পানি ঢুকে গেছে। এদিকে জেলা প্রশাসন বন্যার্তদের সাহায্যের জন্যে চাল বরাদ্দসহ শুকনো খাবার পাঠিয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রুয়েল সাংমা জানান, বৃষ্টি আর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি ঢলের পানিতে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের সবকয়টিতেই কমবেশি পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে রংছাতিসহ চারটি ইউনিয়নে বেশি পানি ঢুকেছে। এতে নিচু এলাকার ৪০ থেকে ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিন শতাধিক পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের সাহায্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম জানান, গতকাল সকালে উপজেলার কুল্লাগড়া, কাকড়গড়া ও বিরিশিরি ইউনিয়নের ৮ গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। এই গ্রামগুলোর প্রায় দুই’শ পরিবার বাড়ি ছেড়ে ইউনিয়ন পরিষদের ভবনগুলোতে উঠেছেন। তাদের জন্য জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে।

নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, দুই উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন করে মোট ২০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার পর প্রয়োজনীয় সাহায্য দেয়া হবে।

About digitalbanladesh2

চেক

ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা নিয়ে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, ব্যাংকের চাপ বাড়ছে

অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২৭মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): আগামী মাস থেকে দেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *