দেশের নয় জেলায় বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাবনায় বজ্রপাতে মারা গেছেন বাবা-ছেলেসহ চারজন। সুনামগঞ্জেও বাবা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাবনা, সুনামগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও নেত্রকোণায় এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর ও ডেস্ক নিউজ:
পাবনা: বেড়া উপজেলায় পাট ধোয়ার সময় বজ্রপাতে মারা গেছেন বাবা-ছেলেসহ চারজন। এরা হলেন, বেড়ার চাকলা ইউনিয়নের পাঁচুড়িয়া গ্রামের মোতালেব সরদার (৫৫), মোতালেবের দুই ছেলে ফরিদ উদ্দিন (২২) ও শরিফ উদ্দিন এবং একই গ্রামের রহম প্রামাণিক (৫৫)।
দুপুর সোয়া দুইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বেড়া থানার ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এলাকাবাসী তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
সুনামগঞ্জ:
তাহিরপুর উপজেলায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে পিতা-পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, হারিদুল মিয়া (৪৭) ও তার ছেলে মো. তারা মিয়া (১২)। তাদের বাড়ি উপজেলার ২ নম্বর দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিক কিলা গ্রামে।
সকাল ১১টায় উপজেলার ঘারকিত্তা হাওরে মাছ ধরতে যান হারিদুল ও তার ছেলে। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় বজ্রপাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেনড়- মকবুলের ছেলে আল আমিন (৩০), গোলাম রসুলের ছেলে হুদা (৩২) ও মো. বরকতের ছেলে হামিদুল (৩৫)। তাদের বাড়ি মেহেরপুরের বারাদি ইউনিয়নে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোনিয়া আহমেদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও ফুলপুর উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে ফুলবাড়িয়ায় বজ্রপাতে চৈইত কোচ (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুপুরে উপজেলার বড়বিলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়বিলা বিলে চৈইত ও তার বড় ভাই মনু বর্মন মাছ ধরছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই চৈইতের মৃত্যু হয়। এতে তার ভাই মনুও আহত হন।
এছাড়া, দুপুরে ফুলপুর উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় কৃষকসহ দু’জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- কৃষক জামাল উদ্দিন (৪০) ও সোহাগ মিয়া (২৪)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুরে কৃষক জামাল ধানের চারা নিয়ে ফসলের মাঠে যাওয়ার সময় এবং সোহাগ মিয়া নিজের হাঁসের খামারে খাবার দিতে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেবুন্নাহার শাম্মী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী:
গোদাগাড়ী উপজেলায় জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে দুরুল হুদা (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
দুপুর তিনটার দিকে মাছমারা বেনীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুরুল হুদা মাছমারা গ্রামেরই বাসিন্দা।
গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আযম তৌহিদ বজ্রপাতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জমিতে কাজ করছিলেন কৃষক দুরুল হুদা। এ সময় হালকা বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। এ নিয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হবে।
নেত্রকোণা:
নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় গরু চরাতে মাঠে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে এনামুল হক (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এনামুলের বাড়ি সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী।
রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক জানান, সকালে গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছিলেন এনামুল। পথেই বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মাগুড়া:
মাগুরার মোহম্মদপুর উপজেলায় বজ্রপাতে মাজেদ মোল্যা (৪০) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে উপজেলার ধুয়ালি এলাকার নালিয়ার বিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, বিকেলে মাজেদ মোল্যা বৃষ্টির মধ্যে নিজ ক্ষেতে ধান রোপণ করছিলেন। তখন বজ্রপাতের আঘাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খুলনা:
খুলনার রূপসা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মদন বিশ্বাস (৩০) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। এসময় কার্তিক বিশ্বাস (৩৫) নামে অপর এক জেলে গুরুতর আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৩ জুলাই) রাত ১০টার দিকে রূপসা নদীর মাথাভাঙ্গা এলাকায় মাছ ধরার সময় এ ঘটনা ঘটে। তাদের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার সরাফপুর ইউনিয়নের গাওঘরা গ্রামে।
কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় বজ্রপাতে কালা হাশিম (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় একটি গরুও মারা গেছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে উপজেলার সাজনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কালা হাশিম উপজেলার সাজনপুর গ্রামের আব্দুল আমিনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে বাড়ির পাশে হাওর থেকে গরু আনতে যান কৃষক কালা হাশিম। পরে বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে শুরু হয়। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা একটি গরুও মারা যায়।