Sunday , April 20 2025
ব্রেকিং নিউজ
Home / অন্যান্য খবর / ডেঙ্গুতে কাঁপছে গোটা দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া

ডেঙ্গুতে কাঁপছে গোটা দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া

সবচেয়ে বাজে অবস্থা ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে।
সিঙ্গাপুরেও আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক।
নাগরিকদের সতর্ক করেছে চীন। ভিয়েতনামসহ
আরও কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।

ঢাকায় এডিস মশার বৃদ্ধিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে যখন তীব্র সমালোচনা, তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ রীতিমতো কাঁপছে এ জ্বরে। ডেঙ্গুর এমন বিস্তার এর আগে কখনো দেখা যায়নি।

বিশেষ করে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপিন্সে এই জ্বরে অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় জাতীয় ডেঙ্গু সতর্কতাও জারি করেছে থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন।

ঢাকার পরিস্থিতিও অনেকটা একই রকম। হাসপাতালে ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই দশা। সরকারি হিসাবে আটজন এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে অভিভাবকরা। মশা নিধনে নগর কর্তৃপক্ষের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে জন-অসন্তোষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হাইকোর্টও।

তবে এমন পরিস্থিতি যে কেবল ঢাকায় তা নয়, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ, যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বাংলাদেশের তুলনায় ভালো।

ব্যাংকক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরে গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে ৬৫২টি। আর গত তিন মাসে দেশটিতে মোট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ২৩ জন।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফিলিপাইনে। সেখানে গত পাঁচ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রায় ৫০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ নিশ্চিত করেছে। আর সব মিলিয়ে দেশটিতে এক লাখ ছয় হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

ফিলিপাইনের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, তাদের দেশে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় দেশজুড়ে জাতীয় ডেঙ্গু সতর্কতা জারি হয়েছে।

থাইল্যান্ডে গত কয়েক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত অন্তত ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হজারের বেশি মানুষ। দেশটিতে কেবল গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি রোগী। এ বছরের শেষের দিকে দেশটিতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছাতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা না দিলেও ডেঙ্গুতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় চার হাজার মানুষ।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মতো না হলেও চীন, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামেও বড় আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ। এজন্য জনগণকে সতর্ক করেছে চীন ও ভিয়েতনাম।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বাড়ির আঙিনায় মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে

ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত একটি ক্রান্তীয় ভাইরাস। এখনো পর্যন্ত এর সুপরিচিত কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশের ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে।

প্রতি বছর বিশ্বের যেসব দেশের মানুষের ডেঙ্গু সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়, তার প্রায় ৭৫ শতাংশই দেখা যায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।

ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ বোঝা যায়, আক্রান্ত হওয়ার পর তিন থেকে ১৪ দিনের মাথায়। ভাইরাসে আক্রান্তদের লক্ষণ ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে বোঝাও যায় না যে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বেশিরভাগ সময়ই আক্রান্তদের শরীরে বিভিন্ন অংশে ব্যথা, চুলকানি ও বমি হয়। প্রচণ্ড মাথা ব্যথার পাশাপাশি অনেক সময় জ্বর ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছায়।

ঢাকা শহরের নাগরিকরা সাধারণত মশা নিধনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তবে নিজেরা বাসাভাড়িতে খুব একটা সচেতন থাকেন না। ফলে অনেক সময় দেখা যায়, ট্রি-প্লান্টেশনের টবে জমে থাকা পানিতে লার্ভা ছাড়ে এডিস মশা। এসব মশাতেই পরে আক্রান্ত হন তারা।

তবে নগরবাসী চায়, সরকার নিয়মিতভাবে সব ধরনের মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ ছিটাক। কিন্তু গবেষণার ফলাফলের মাধ্যমে জনগণ জানতে পেরেছে, মশা নিধনে সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটায়, তা অকার্যকর।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) পৃথক দুটি গবেষণায় দেখেছে, ঢাকার দুই সিটিতে ছিটানো ওষুধে এডিস মশা মরছে না। বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় নিয়মিত জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। গত বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নতুন কার্যকর ওষুধ আনার তাগিদ দিয়েছেন।

অবশ্য ওষুধ কার্যকর নয়- এমন কথা উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, আইসিডিডিআরবির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তারা নিজেরাও পরীক্ষা করেছেন। এতে ওষুধের কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে।

About digitalbanladesh2

চেক

ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা নিয়ে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, ব্যাংকের চাপ বাড়ছে

অর্থ-বানিজ্য ডেস্ক, ২৭মার্চ ২০২৫ইং (ডিজিটাল বাংলাদেশ রিপোর্ট): আগামী মাস থেকে দেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপির নতুন নীতিমালা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *