আজ ২২ মে বুধবার প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)তে পিআইবি-এটুআই গণমাধ্যম পুরস্কার-২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার সুবিধার্থেই সরকার আইন ও বিধান অনুযায়ী কেরানীগঞ্জে আদালত স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার আইন ও বিধান অনুযায়ী যেকোন জায়গায় আদালত স্থাপন করতে পারে এবং সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে আইন ও আদালতকে সহযোগিতা করা। যেহেতু বিএনপি দাবি করছে বেগম জিয়া অসুস্থ্য এবং তার আর্থাইটিজের পুরনো কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। তার সুবিধার্থেই কেরানীগঞ্জে আদালত স্থাপন করা হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বিচারকার্যে সহযোগিতা করা। আইনী প্রক্রিয়াকে সহায়তা করার জন্য এবং একই সাথে বেগম খালেদা জিয়ার সুবিধার্থে এটি স্থাপন করা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে সংবিধানের কোন বিষয় নেই, আদালত স্থাপন করা, আর বিচারকার্য পরিচালনা করা দুটি ভিন্ন বিষয়। বিচারক সেখানে বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিচারান্তে কি করবেন এটা বিচারালয়ের বিষয়, কিন্তু বেগম জিয়ার সুবিধার্থেই সেখানে আদালত স্থাপন করা হয়েছে, তাকে আর অনেক দূরে আদালতে আনতে হবে না, তার শারিরীক কষ্ট লাঘব হবে। এতে তো বিএনপির খুশী হওয়ারই কথা।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আইনী প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক দলের চাওয়া-পাওয়ার বিষয় থাকতে পারে না। এক্ষেত্রে আদালতের সুবিধার বিষয়টিই হচ্ছে মুখ্য। একই সাথে যিনি আসামী তার সুবিধার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে পারে।
খুলনা পাটকল শ্রমিকদের বিষয়ে খুলনার এক নেতার সাথে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ফোনালাপ ফাঁস হওয়া বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আগেও অনেক নাশকতা করেছে, বাংলাদেশের মানুষের উপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে শত শত মানুষ হত্যা করেছে, হাজার হাজার মানুষকে আগুনে জ্বলসে দিয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি এবং বেসরকারি সম্পত্তি ক্ষতি করেছে। এখন নিজেদের আন্দোলন করার সামর্থ নেই, অন্যরা যখন আন্দোলন করে সেখানে তারা টাকা পয়সা দিয়ে সেটিকে বিভ্রান্ত ও নাশকতামূলক কার্যক্রম করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এধরনের কার্যক্রম অতীতেও অনেকবার ফাঁস হয়েছে। কিন্তু তাদের চরিত্র বদলায়নি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে যে কার্যক্রমগুলো করেছে, তা থেকে আপাতত বিরত থাকলেও রিজভীর এই ফোনালাপের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যেকোন সময় সুযোগ পেলে তারা একই ধরনের কার্যক্রম করবে, কিংবা অন্যদের দিয়ে করাবার চেষ্টা করবে এবং করছে।
পিআইবি পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আবেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সম্মানিত অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য সচিব আব্দুল মালেক, এটুআই’র পলিসি এডভাইজর আনীর চৌধুরী, বক্তব্য রাখেন ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জুরিবোর্ডের সদস্য শ্যামল দত্ত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এদেশ এখন ডিজিটাল রূপান্তরের যুগে এসে পৌঁছেছে, দেশের সাথে ডিজিটাল শব্দটি যোগ হয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, এদেশকে বিশ্ব এখন সম্মান করে, উন্নয়নশীল দেশগুলো বাংলাদেশকে অনুকরণ করে।’চলতি বছরের শেষ নাগাদ দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০ হাজারের মতো ডাকঘর ডিজিটাল ডাকঘরে রূপান্তর হচ্ছে। চিঠি হারিয়ে গেলেও এদেশ থেকে ডাকঘর হারিয়ে যাবে না।
তথ্যসচিব বলেন, বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। ২০০৯ সালের আগে এদেশে পত্রিকা ছিল ৭৭৮টি, বর্তমানে ৩১২৪টি পত্রিকা রয়েছে, ৪৫টি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। সরকার কমিউনিটি রেডিও চালু করেছে, যা উপকূলের মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম খবর দিয়ে সহায়তা করে।
অনুষ্ঠানে ৭টি ক্যাটাগরিতে ৭ জন সাংবাদিককে পুরস্কার প্রদান করেছে। এরা হলেন, টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে বুদ্ধদেব কুন্ডু (বৈশাখী টিভি), অনলাইন সংবাদপত্র ক্যাটাগরিতে রফিকুল ইসলাম মন্টু (রাইজিং বিডি), জাতীয় পত্রিকা (ইংরেজি) ক্যাটাগরিতে ইব্রাহিম হোসাইন (ঢাকা ট্রিবিউন), বেতার ক্যাটাগরিতে মো. মোস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ বেতার), আঞ্চলিক সংবাদপত্র ক্যাটাগরিতে উজ্জ্বল বিশ্বাস (দৈনিক গ্রামের কাগজ), ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে সৈয়দ জাকির হোসেন (ঢাকা ট্রিবিউন) এবং জাতীয় পত্রিকা (বাংলা) ক্যাটাগরিতে মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ (দৈনিক শেয়ার বিজ)।