নিউজ ডেস্ক: সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর জেল-জরিমানা দেওয়ার ঘটনায় সমালোচিত কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, তাকে প্রত্যাহারসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হতে পারে।
রোববার (১৫ মার্চ) সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে কুড়িগ্রামের ডিসির বিরুদ্ধে করা তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পান প্রতিমন্ত্রী।
গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বাড়ির দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের জেল দেওয়ার ঘটনায় ডিসি সুলতানা পারভীন বিতর্কের মুখে পড়েছেন।
এই ঘটনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নজরে এলে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার অফিসের কর্মকর্তারা তদন্ত করে প্রতিবেদনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খসড়া একটা প্রতিবেদন পেয়েছি। মূল প্রতিবেদন কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত করেছি, তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা অনেকগুলো অনিয়ম দেখেছি। সেই অনিয়ম অনুযায়ী এরইমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। তার বিরুদ্ধে আমাদের ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিউর অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘তাৎক্ষণিক আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যে নিয়ম-কানুন আছে সে অনুযায়ী যে কাজগুলো হয়নি এবং যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলোর সত্যতা পেয়েছি। বিধায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকে কী রোল প্লে করেছেন, সে রোলটি যদি আইন বহির্ভুত হয়, তাহলে অবশ্যই দোষী সাব্যস্ত হবে এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
ডিসির অধীনস্তরা কাজে কোনো গাফিলতি করেছেন কি-না তাও খতিয়ে দেখার কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আরিফুল ইসলাম জামিন পেয়েছেন এবং তিনি মুক্ত হয়েছেন। কিন্তু সরকারের যে ভাবমূর্তি নষ্ট হলো, সে বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। অল্প সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই জনপ্রশাসন মন্ত্রী উল্লেখ করে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘তার স্বাক্ষরিত যে বিষয়টি আছে, সেটি সম্পূর্ণ হলেই আমাদের জানানোটা বিধি সঙ্গত হয়। তার আগে না জানানোটাই উচিত।’
কুড়িগ্রামের ডিসির বিরুদ্ধে কী ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত তাকে প্রত্যাহার করা হবে। দ্বিতীয়ত, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে এবং সে অনুযায়ী বিচার হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জনমুখী জনপ্রশাসন গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, আমাদের এটি রূপকল্পে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৭ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন, তিনি সেভাবে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স এবং জনমুখী জনপ্রশাসন গড়ার ক্ষেত্রে যে কোনো অন্তরায় থাকলে সেটা দূর করা এবং সে ক্ষেত্রে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ সাজা হবে।’
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা নিয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত অনেক জরুরি। রমজান মাসে এ আদালত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উনার (ডিসি) কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা মাথায় রেখেছি। আমরা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি- জনগণের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত অত্যন্ত প্রয়োজন। সেখানে যেন কোনো বিকর্ত সৃষ্টি না হয়। তার ভুলের কারণে কোনো কিছু হলে তাকেই শাস্তি পেতে হবে।’
কুড়িগ্রামের ডিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগের বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘পাঁচ-ছয় হাজার কর্মকর্তা। এর মধ্যে দুই একজন খারাপ হতে পারে। যখন আমরা নিয়োগ দেই তখন তো দু’একটি ভুল হতেই পারে। একজন কর্মকর্তার অতীত কর্মকাণ্ড বিচার বিশ্লেষণ করে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন এসব বিষয় আসেনি। দু’একজন কর্মকর্তার অনিয়মের দায়ভার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কখনোই গ্রহণ করে না। ডিসি নিয়োগের জন্য আগে শুধু কিছু সংস্থা থেকে প্রতিবেদন নেওয়া হতো, এখন জেলা প্রশাসক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ছাড়াও স্বাধীনতার পক্ষের লোকের কাছেও আমরা খোঁজখবর নিই।’
তার বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগেরও তদন্ত হবে বলে জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।